সরষের মধ্যে ভূত
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে কিশোর অপরাধ ও গ্যাং-কালচার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা শুধু অপরাধই করে না, আধিপত্য বজায় রাখতে পরস্পরের সাথে সংঘর্ষেও জড়ায়। সমাজবিজ্ঞানী ও পুলিশের ভাষ্যমতে, কিশোরদের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে প্রথম বিরোধ ও জোট বাঁধার প্রবণতা তৈরি হয়। সেখান থেকে গড়ে ওঠে গ্যাং।
রাজধানীসহ নানা জেলায় আগে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অপরাধীচক্রের নেতৃত্ব দিত। এখন ক্ষমতাসীন দল এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো কোনো নেতার নাম আসছে। নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারে শহরাঞ্চলে কাউন্সিলর, সরকারদলীয় নেতা অনেকে কিশোর অপরাধী চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিএমপি সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে রাজধানীতে যত খুন হয়েছে তার ২৫টি কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্ট। কিশোর গ্যাং নতুন করে আলোচনায় এসেছে ৯ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে একটি খুনের ঘটনায়। ওই দিন ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করার জেরে নীরব হোসেন নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে খুন করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় পদ্মার চর থেকে মিলন হোসেন নামে এক তরুণের ৯ টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হন জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এস কে সজীব। পুলিশ বলছে, সে একটি কিশোর গ্যাংয়ের নেতা।
সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায়, জমি দখলে সহায়তা, ইন্টারনেট সংযোগ, ক্যাবল টিভি (ডিশ) ব্যবসায় ও ময়লা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, উত্ত্যক্ত করা, যৌন হয়রানি করা, হামলা, মারধরসহ নানা অপরাধে জড়িত। সরকারদলীয় স্থানীয় নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ কেউ এসব অপরাধীর প্রশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করছেন। উদ্বেগজনক হলো- যারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করবেন, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ অপরাধ সৃষ্টির অংশ হিসেবে কাজ করছেন। সেখান থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
গণমাধ্যমের খবর, ঢাকায় এখন অন্তত ৮০টি কিশোর বাহিনী রয়েছে। যেগুলোর বেশির ভাগ ‘কিশোর গ্যাং’ নামে পরিচিত। নামে কিশোর গ্যাং হলেও এসব বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যের বয়স ১৮ বছরের বেশি। পুলিশের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ২১ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ‘গ্যাং’ প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ এসেছে। সারা দেশের ‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ে পুলিশ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল ২০২২ সালের শেষে। তাতে বলা হয়, সারা দেশে অন্তত ১৭৩টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে এদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৭৮০টি। এসব মামলায় আসামি প্রায় ৯০০ জন। সহযোগী দৈনিকটির অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, পুলিশের প্রতিবেদনে ঢাকায় যে চিত্র উঠে এসেছিল, তার চেয়ে এখন আরো পরিস্থিতি খারাপ। যেমন পুলিশের তালিকার বাইরে পত্রিকাটির অনুসন্ধানে ঢাকায় আরো অন্তত ১৪টি কিশোর গ্যাংয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে।
দেশে কিশোর গ্যাংগুলো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয় ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এসব বাহিনী এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। রাজধানীতে, বড় শহরে মানুষের নিরাপদ বসবাসের ক্ষেত্রে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
নিকট অতীতে দেশে সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষায় পরিবার ও স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের ভূমিকা ছিল। তারা কিশোরদের বখাটেপনা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করতেন। এখন মুরব্বিদের জায়গাটি নিয়েছেন রাজনীতির সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা। তারা কিশোরদের ব্যবহার করেন।
সাধারণত জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতির সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের সখ্য থাকার কথা সর্বস্তরের মানুষের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধীদের সাথে তাদের অনেকের সখ্য গড়ে উঠেছে। ফলে খারাপ লোকের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে বরং তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এতে সমাজে অপরাধ যেমন বাড়ছে, তেমনি অপরাধীদের দৌরাত্ম্য ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। আসলে যারা অপরাধীদের দমন করবেন তারাই যদি দুষ্কৃৃতকারীদের মদদ দেন; তাহলে সেই বাংলা প্রবাদ স্মরণে আসে- যে সরষে দিয়ে ভূত তাড়ানো হবে, তাতে লুকিয়ে রয়েছে ভূত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা