২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির জমি বেহাত

অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

-

সরকারি অফিস-আদালতে আগেও দুর্নীতি কমবেশি হয়েছে। এখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। চামচ বালিশ চেয়ারসহ সাধারণ আসবাব ক্রয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। পুকুরচুরি বলে বাংলায় ব্যবহৃত প্রবাদ সরকারি কাজের দুর্নীতিতে পানসে হয়ে গেছে। এসব শব্দ দিয়ে হিমালয়সম দুর্নীতি প্রকাশ করা যাচ্ছে না। দেশে সংঘটিত দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র প্রকাশে নতুন শব্দ-প্রবাদের প্রচলন দেখা দিয়েছে।
উচ্চ দুর্নীতির মধ্যে চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে সরকারি সম্পত্তি বেহাতের ঘটনা। সারা দেশে অসাধু চক্র সরকারি সম্পত্তি দখল করছে। এসব চক্র সবসময় সক্রিয়। সহযোগী একটি দৈনিকে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির জমি বেদখল হওয়ার খবর দিচ্ছে।
১৯৭৪ সালে বগুড়ার শেরপুরে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই এলাকায় বড় একটা জমি পাওয়ায় সরকার সেখানে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত একজন অবাঙালির ১০২ একর পরিত্যক্ত জমিতে এটি গড়ে ওঠে। আশপাশে আরো খোলামেলা জমি পাওয়া যায়। ক্রমে প্রতিষ্ঠানটির জন্য ১২০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাটির জন্য অধিগ্রহণ করা জমির একটি অংশ জালিয়াতির মাধ্যমে বেহাত হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বাইরের লোকদের দখলে যায়। এ নিয়ে খোদ দায়িত্বশীলদের ভূমিকা রহস্যজনক ছিল।
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের সময় ১১ একরের বেশি সম্পত্তি বাইরে রেখে দেয়া হয়। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ২৪ বছরে আলোর মুখ দেখেনি। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্ধারিত মৌজার মধ্যে অন্যের জমি রয়েছে। ২০২৩ সালে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের আওতায় ঢাকার সেটেলমেন্ট প্রেসের মুদ্রণে এ মৌজার মধ্যে ২২ জন ভূমি মালিকের নাম রয়েছে। এসব জমিতে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চাতাল, খামার ও বাগান রয়েছে। একাডেমির জমি বেহাত হওয়ার পেছনে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মহাপরিচালক, পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয় আলোচিত হচ্ছে। তাদের একজন দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে। এর সাথে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তারাও রয়েছেন। কিন্তু সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে কোনো তদন্ত নেই। বরং জমি উদ্ধারে নেয়া ছয় সদস্যের কমিটিতে অভিযুক্তরাও রয়েছেন। উদ্ধার কমিটি ২০ মাসের মধ্যে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।
বাংলাদেশে সরকারি কাজে মন্দ-সংস্কৃতির প্রাবল্য চোখে পড়ার মতো। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফাঁকি দিতে পারলে তাকে কৃতিত্ব মনে করেন। নিজেরা একটা বিশেষ কিছু অর্জন করেছেন এমন আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। সরকারি সম্পত্তির ব্যাপারে তাদের মনোভাব থাকে বেআইনি ভোগদখলের। জমিজমা পেলে দখল করা হয় তাদের লক্ষ্য। সরকারের শত শত প্রতিষ্ঠানের জমি কিংবা খাসজমি দখল করেছে সরকারে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রেলওয়ের জমি দখলের বিশেষ দুর্নাম রয়েছে। অসাধু ব্যক্তিরা এগুলো করতে পারছে জবাবদিহি না থাকায়।
বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির বেহাত হওয়া জমি নিয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দরকার। একই সাথে যারা অসাধু কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত জমি উদ্ধার করতে হবে সরকারকে।


আরো সংবাদ



premium cement