পড়ালেখায় ব্যাঘাত শিক্ষার্থীদের
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করেন। আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে বেশি আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। কারণ, এখনো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সঙ্গত কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সারা দেশের নানা প্রান্তের ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসেন। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা অনেক পরিবারের সন্তানও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আবাসিক সুবিধা না থাকায় তারা বড় ধরনের হোঁচট খান।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সঙ্কট থাকায় অনেক শিক্ষার্থী হলের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। ভাড়া বাসায় থাকায় খাওয়ার সমস্যাসহ লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। খরচের পাশাপাশি অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হয় অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের। ফলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, দেশে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় ১৬৯টি। ৫৫টি সরকারি ও ১১৪টি বেসরকারি। অধিভুক্ত কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৭ জন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের বরাতে একটি সহযোগী জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন, দেশের অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ-মাদরাসা ছাড়া) অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ শতাংশের আবাসিক সুবিধা নেই। বাকি ৪০ শতাংশের এ সুবিধা আছে। আর ২০২২ সালে ১০০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশের জন্য আবাসিক সুবিধা আছে।
ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসন সঙ্কটসহ উচ্চশিক্ষার নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয় ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অধিভুক্ত কলেজ-মাদরাসা ছাড়া ২০২২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ৯২ হাজার ২৯৬ জন। আবাসিক সুবিধা ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৩৬ জনের। তাদের মধ্যে ৬৮ হাজারের বেশি ছাত্র এবং সাড়ে ৪৯ হাজার ছাত্রী।
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট আবাসিক হল, হোস্টেল ও ডরমিটরি ছিল ২৫২টি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরিকল্পিতভাবে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোয় আবাসিক সঙ্কট তীব্র হয়েছে। আবার দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে হলে ওঠেন। তবে তারা যেসব কক্ষে ওঠেন (গণরুম নামে পরিচিত) সেখানে পড়াশোনার পরিবেশ থাকে না। অনেক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া শেষ হলেও রাজনৈতিক পরিচয়ে হলে থাকেন। অনেক আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ করেন সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর সহযোগী ওই পত্রিকাকে বলেছেন, নানা বাস্তবতা ও আর্থিক সক্ষমতার অভাবে নতুন হল না করে বিভাগ ও আসন বাড়ানো হয়। আবাসিক সুবিধা না বাড়িয়ে শিক্ষার্থী বাড়ানো উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত অশুভ রাজনীতি হয় সেগুলো হয় মূলত আবাসিক হলের আসনকেন্দ্রিক ঘটনার কারণে। আবাসিক হলে আসন সঙ্কট না থাকলে এ সমস্যাও হতো না।
শিক্ষাবিদদের মতো আমরাও মনে করি, সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক ব্যবস্থা থাকতে হবে, এর বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু আমাদের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী আবাসিক ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কারণ, তাদের বড় অংশ আসেন মফস্বল থেকে। অনেকের পারিবারিক অবস্থা অসচ্ছল। আবাসিক সুবিধা না পেলে ওই সব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ঝুঁকিতে থাকে। ভালোভাবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় ভালোভাবে পড়াশোনা করা সম্ভব হয় না। সঙ্গত কারণে সব সময় অনিশ্চয়তায় কাটে তাদের। এ জন্য শিক্ষাজীবনে তারা কাক্সিক্ষত ফল করতে পারেন না। তাই আবাসিক সুবিধা সম্প্রসারণের পাশাপাশি মেধা ও চাহিদার ভিত্তিতে হল প্রশাসন যেন শিক্ষার্থীদের হলে উঠাতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা আবশ্যক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা