২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শিশুদের ব্যাপক হারে যৌন পীড়ন

মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়

-

দেশে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক পীড়নের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে বড় একটি অংশ হচ্ছে যৌন নিপীড়ন। কেবল কমজোরির কারণে বড়দের কাছ থেকে এ পাশবিক আচরণ হতে পারে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি গবেষণার তথ্য মতে, ঢাকা মহানগরে যত শিশু নির্যাতিত হয় তার ৭৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন। শহরে থাকা ব্যস্ত মা-বাবার শিশুসন্তানরা এ আচরণের শিকার হয় বেশি। পাড়া-প্রতিবেশী, অপরিচিত লোক শিশু নির্যাতন করলেও বড় একটি অংশ নিজের আত্মীয়স্বজনদের দ্বারা পীড়িত হয়। তবে শিশু নির্যাতনের এ চিত্র সারা দেশে সবসময় লক্ষ করা যায়। বড় ধরনের অঘটনের পর সেটি জনসম্মুখে আসে। একটি সুস্থ সুন্দর জাতি বিনির্মাণে এ ধরনের পৈশাচিকতা একটি বড় বাধা।
শিশুর ওপর পীড়ন এবং সেটি একপর্যায়ে যৌন নির্যাতন হওয়া মূলত একটি রোগ। এর দ্বারা সমাজের বড় একটি অংশ আক্রান্ত। মানুষ সুযোগ পেলে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৯ শতাংশ শিশু অপরিচিত ব্যক্তির হাতে নির্যাতিত হয়। শিশুরা যে নিজের ঘরে নিরাপদ নয়, তা এ গবেষণার তথ্য বলছে। ১২ শতাংশ শিশু চাচা-মামা ও ৬ শতাংশ শিশু চাচাতো-মামাতো ভাইয়ের মাধ্যমে নির্যাতিত হচ্ছে। ৯ শতাংশ হচ্ছে দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের মাধ্যমে। বন্ধুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে ৪ শতাংশ শিশু।

শারীরিক শক্তি কম হওয়ায় বড়রা এটি সহজে ঘটাতে পারছে। যারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার ৭৪ শতাংশ আপত্তিকর স্পর্শে। ৩৪ শতাংশকে জোর করে অশ্লীল জিনিস দেখানো হচ্ছে। ২৮ শতাংশকে যৌনাঙ্গ স্পর্শের মাধ্যমে নির্যাতন করা হচ্ছে। ২৪ শতাংশ শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ এ সংক্রান্ত ২৫টি মামলার অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বয়ঃসন্ধিতে কিংবা যৌবনের প্রারম্ভে পাশবিকতার শিকার হচ্ছে বেশি। ঢাকা শহরের ১৪-১৬ বছরের শিশুরা সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার। এসব মামলার আটটি ধর্ষণের, বাকিগুলো ধর্ষণচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী শিশুরা একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
শহরে এ ধরনের শিশুদের যৌন নিপীড়নের অন্যতম কারণ- চাকরিজীবী মা-বাবা সন্তানকে কার কাছে রেখে যাবেন, সে ব্যাপারে সচেতন নন। শিশু পীড়ন ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার হার যে কম নয় তা এ গবেষণা থেকে আঁচ করা যায়। নির্যাতনের শিকার ৩৪ শতাংশ থানায় গেছে অভিযোগ করতে। এর কারণ বলা হয়েছে, ৪৩ শতাংশ ক্ষেত্রে দুর্বল সামাজিক-আর্থিক অবস্থা, ১৭ শতাংশ ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাব। এ গবেষণায় অনূর্র্ধ্ব ১৮ বছর বয়সী ১০০ শিক্ষার্থী ও ৫০ পথশিশুর ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে এটি করা হয়েছে। তারপরও শিশু নির্যাতন ও তাদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিস্তার কতটুকু- এর মাধ্যমে অনুমান করা যায়। তবে যৌন নির্যাতন-সংক্রান্ত ঘটনাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধামাচাপা পড়ে যায়। তাই এ অবক্ষয়ের বিস্তার ও মাত্রাগত ক্ষত যে আরো গভীর তাতে সন্দেহ নেই।
আমাদের সমাজ এমনকি পরিবারেও শিশুরা নিরাপদ নয়। পাশবিকতা চরিতার্থ করতে বিশেষ করে পুরুষরা যে কারো ওপর চড়াও হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি অসুখ। এ অসুখ সারাতে প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণ। এ শিক্ষা আসতে পারে নৈতিক মূল্যবোধ থেকে। এ শিক্ষা আমাদের মধ্য থেকে এখন বিলুপ্ত বলতে হবে। এ অবস্থায় কোনোভাবে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ আশা করতে পারি না আমরা।


আরো সংবাদ



premium cement