পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিতে হবে
- ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
মিয়ানমার পরিস্থিতির বড় ধরনের অগ্রগতি বেশ কিছু দিন আঁচ করা যাচ্ছিল। প্রতিবেশী দেশগুলোতে সামরিক বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে জান্তার নৈতিক মনোবলে চিড় ধরার বিষয়টি সামনে এসেছে। সর্বশেষ, বাংলাদেশ সীমান্তে একইভাবে জান্তার সদস্যরা পালিয়ে প্রবেশ করেছে। বিদ্রোহীদের সমন্বিত তাড়া খেয়ে জান্তার একটি অংশ দিগি¦দিক শূন্য হয়ে পালাচ্ছে। মিয়ানমার প্রশ্নে বাংলাদেশের বিদ্যমান সরকারের মধ্যে একটি জড়তা শুরু থেকেই লক্ষ করা গেছে। দেশটির সামরিক জান্তা বাংলাদেশের সাথে ক্রমাগত অঙ্গীকার ভঙ্গ, ছলচাতুরী ও প্রতারণা করে গেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ অশুভ সামরিক চক্রের সাথে এক ধরনের গতানুগতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। একদল মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, প্রতিনিয়ত বিশ্বাসভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে যে ধরনের কৌশল অবলম্বন জরুরি তা হয়নি। ফলে রোহিঙ্গাদের ওপর বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার পরও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তারা কোনো ধরনের কার্যকর চাপ অনুভব করেনি।
বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে ‘কারো সাথে শত্রুতা নয়’ এ ধরনের একটি নীতিবাক্য আমাদের রয়েছে। বাস্তবে এর সাথে আমাদের কাজের সেই ধরনের মিল নেই। আমাদের বৈদেশিক নীতিতে মূলত প্রাধান্য পেয়েছে সরকারি দলের স্বার্থ। নিজেদের দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থ অটুট থাকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা পররাষ্ট্রনীতি সাজাচ্ছি। ফলে নানা সময় আমাদের কাছে সুযোগ এলেও মিয়ানমারের জান্তার ওপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা আমরা নেইনি। তারই ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করতে বাধ্য হচ্ছে। সর্বশেষ আমরা দেখতে পাচ্ছি, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা জান্তা সরকারের ক্ষমতার ওপর আস্থা হারিয়েছে। বিদ্রোহীদের আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে আমাদের দেশে আশ্রয় নিচ্ছে।
মিয়ানমারজুড়ে জান্তার পরাস্ত হয়ে পিছু হটার খবর আসছে। গত কয়েক দিনে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর (এফএও) বিদ্রোহীদের কাছে জান্তা আরো বেশ কয়েকটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে আসা বিবরণে দেখা যাচ্ছে, দেশটির সম্মিলিত গণতান্ত্রিক শক্তি ও বিদ্রোহীরা একযোগে জান্তার ওপর আক্রমণ করছে। তাদের কাছে উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্র থাকার কথা জানা যাচ্ছে। সামরিক কৌশল ও অভিজ্ঞতার দিক দিয়েও তারা জান্তার থেকে এগিয়ে থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর, সামরিক ঘাঁটি ও সীমান্ত চৌকি তারা দখল করে নিচ্ছে। তারা জান্তার ঘাঁটিগুলোর রসদ বন্ধ করে দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় জান্তার মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। এ ধরনের অগ্রগতির পেছনে মিয়ানমারের বাইরের শক্তিগুলোর সক্রিয়তা টের পাওয়া যাচ্ছে। অস্ত্র ও রসদ সব কিছু এখন জান্তাবিরোধী শক্তির কাছে আছে। এর ওপর রয়েছে সারা দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি একটি সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হতে যাচ্ছে। এ সময় বিচক্ষণতা প্রদর্শন প্রয়োজন। মিয়ানমারে ক্ষমতাবলয়ে গণতান্ত্রিক কিংবা বিদ্রোহী গোষ্ঠী যারাই আসুক, আমাদের তাদের সাথেই কাজ করতে হবে। এরই মধ্যে উভয় পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এমন স্বীকৃতি কখনো জান্তার কাছ থেকে আসেনি।
জান্তা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ে বাংলাদেশও আক্রান্ত হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় ইতোমধ্যে দু’জন প্রাণও হারিয়েছেন। বাংলাদেশের সীমানা লঙ্ঘনের ঘটনাও এর আগে বহুবার তারা ঘটিয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এর প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আমরা দেখিনি, বাংলাদেশ সরকার জান্তার কাছ থেকে কোনো প্রকার প্রতিকার আদায় করতে পেরেছে।
আমরা মনে করি, মিয়ানমার পরিস্থিতি একটি যুগসন্ধিক্ষণে। এই সময়ে বাংলাদেশের একটি সক্রিয় মিয়ানমার কৌশল গ্রহণ করা উচিত যাতে করে যেকোনো ধরনের পরিবর্তনে আমরা সুযোগ গ্রহণ করতে পারি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা