২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জাবিতে গৃহবধূকে ধর্ষণ

ধর্ষকরা যেন শাস্তি পায়

-

সারা দেশে শিক্ষাঙ্গনসহ বিভিন্ন স্থানে অহরহ ধর্ষণসহ নানা গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গত ১৫ বছরে গুরুতর সব অঘটনের জন্য বহুবার সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে চাঁদাবাজির অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বও জড়িয়ে পড়েছিল। এবার সেখানে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান তার বহিরাগত বন্ধু মামুনুর রশিদের সহযোগিতায় এক দম্পতিকে ক্যাম্পাসে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রাখে। পরে তারা দু’জন মিলে ওই নারীকে ধর্ষণ করে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই দুই ধর্ষককে পালিয়ে যেতে আরো তিনজন সহযোগিতা করেছে। এই জঘন্য ঘটনায় পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। আদালত তাদের রিমান্ড দিয়েছেন।
স্মরণযোগ্য যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ১৯৯৮ সালে মানিক নামে এক ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করেন। এরপর সেখানে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি। সব অপরাধ ধামাচাপা দেয়া হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে অনেকে বেড়াতে যান। কিন্তু সবার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অনেকের মোবাইল, টাকা ও ব্যাগ রেখে দেয়া হয়। নারীদের লাঞ্ছিত করা হয়। শনিবারের ঘটনা প্রচার হয়েছে বলে সবাই জানতে পারছেন। যারা এগুলো করছে তারা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থাকে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এই বিদ্যাপীঠের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। তারা প্রতিটা হল থেকে বহিরাগতদের বিদায় করার দাবি জানান। কারণ ১২ বছর আগের অনেক শিক্ষার্থীও হলে থাকছেন।
শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাসে ধর্ষক কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘ধর্ষণমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’; ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে হলে জিম্মি করে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এ ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যত দিন প্রশাসনের মদদে এ ক্যাম্পাসে অছাত্র, অবৈধ ছাত্র অবস্থান করবে, ছাত্রলীগ নামধারী অছাত্ররা নিয়োগবাণিজ্য করবে, চাঁদাবাজি করবে তত দিন এ ক্যাম্পাস থেকে অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়।’
লক্ষণীয়, যেখানেই অঘটন ঘটে, সেখানে ছাত্রলীগের নাম আসে। সিলেটের এমসি কলেজে এক নবদম্পতিকে আটক করে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা অনেকেরই মনে থাকতে পারে। সেটিও করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম চার দিনে ছাত্রলীগ নিয়ে চারটি খবর এসেছে গণমাধ্যমে। তার মধ্যে একটি হত্যার, আরেকটি ধর্ষণের। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটল জাবি ক্যাম্পাসে।
ধর্ষণসহ গুরুতর সব অপকর্ম করার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় নেতৃত্ব বরাবর অভিযুক্তকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে দায়মুক্তি নেয়ার চেষ্টা করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এভাবে দায় এড়ানো যায় কি?
আমরা বলতে চাই, জাবি ক্যাম্পাসে গৃহবধূ ধর্ষণের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। ধর্ষকরা যেন ছাড় না পায়।


আরো সংবাদ



premium cement