২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
এমপিওভুক্ত ৬০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি

অবিলম্বে নিয়োগের উদ্যোগ নিন

-

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে অকারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ নানা কারণে এর মানোন্নয়নের পরিবর্তে অবনতি ঘটছে। বৈশ্বিক যেকোনো শিক্ষাসূচকের দিকে তাকালে এ কথার সত্যতা মিলবে। এই অবস্থাতেও এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক স্বল্পতায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানসহ ব্যাহত হচ্ছে। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে এমপিওভুক্ত প্রায় ৩০ হাজার স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬০ হাজারের মতো পদ শূন্য । ফলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে দলগত নানা অনুশীলন রয়েছে। সেগুলো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া অন্য কারো পরিচালনা করা কষ্টকর। সেখানে শিক্ষকস্বল্পতার মধ্যে পাঠদান চালানো প্রায় অসম্ভব। স্কুলগুলো কিছু খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে সঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা করছে। তবে তা সামান্যই কাজে দিচ্ছে।
২০২৩ সাল থেকে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। চলতি বছর যুক্ত হয়েছে অষ্টম ও নবম শ্রেণী। বিপুল শিক্ষকের পদ খালি রেখে নতুন শ্রেণীর ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অশ্চিয়তা রয়েছে। এমনিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচার রয়েছে। এর পরও যদি শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো শিক্ষা না পায় তা হলে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হবে।
নিয়মিতভাবে শিক্ষকের পদ পূরণে প্রতি বছর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা খুব প্রয়োজনীয় হলেও এটি করতে পারছে না বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে, সর্বশেষ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রকাশের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি এনটিআরসিএ। যদিও চূড়ান্ত সুপারিশ করা প্রার্থীদের মধ্য থেকেও অনেকে যোগদান করেননি। একই সাথে দেখা যাচ্ছে, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রয়োজনীয় বিষয়ের শিক্ষক না পাওয়ায় পদ শূন্য রেখে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, চারু ও কারুকলা বিষয়ে শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না।
শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে একটি সহযোগী দৈনিককে এনটিআরসিএর সচিব বলেছেন, ‘এখনো ১৭তম নিবন্ধনের সনদ বিতরণ শেষ হয়নি। ন্যাশনাল মেরিট লিস্ট করতে হবে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ই-রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। এরপর শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ ও তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। এ ছাড়া আবেদনের বিষয়ে টেলিটকের সাথে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে হবে। তার পর পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।’
আমাদের মনে হয়, শিক্ষাকার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষা বিভাগের যতটা তৎপর থাকার কথা তাতে ঘাটতি রয়েছে। প্রকৃত বাস্তবতায় দেশের শিক্ষা বিভাগ অতিমাত্রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ায় শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে যত না ব্যস্ত, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে। ফলে শিক্ষার মানোন্নয়নে মৌলিক যেসব কাজ করার কথা তা তারা করছেন না। এতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শিক্ষা। এর পরও আমাদের প্রত্যাশা, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান গতিশীল এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে দ্রুততম সময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেবে এনটিআরসিএ।


আরো সংবাদ



premium cement