২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজধানীতে রাস্তার ওপর স্থায়ী পুলিশ বক্স

যান ও পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে

-

প্রয়োজনের তুলনায় ঢাকায় রাস্তা কম। সরু রাস্তায় তাই পর্যাপ্ত ফুটপাথ রাখা যায়নি। মানুষ স্বস্তিতে হাঁটতে পারবে এমন ফুটপাথ ঢাকায় নেই বললেই চলে। কারণ সামান্য ফুটপাথ যা আছে, তাও দখল করে নিয়েছে হকাররা। সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরা ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে ফুটপাথ থেকে। এতে রাজনৈতিক দলের নেতা ও পুলিশ সবার জড়িত থাকার কথা জানা যায়। সর্বশেষ দেখা যাচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশ নিজেদের জন্য রাস্তার ওপর স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছে। রাস্তায় দায়িত্বকালীন নিজেদের কাজকে সহজ করার জন্য এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এমন যুক্তি তারা দিচ্ছে। বাস্তবে ঢাকা শহরে ট্রাফিকের জন্য নির্মিত অবকাঠামো যান চলাচল ও পথচারীদের জন্য বাধা তৈরি করছে।
সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শিয়া মসজিদ মোড়ে রাস্তার মধ্যে একটি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করছে। রিং রোড ও তাজমহল রোড যেখানে মিলছে সেখানে আগে থেকে একটি পুলিশ বক্স ছিল, যেটি স্টিলের নির্মিত। এটিকে ভেফু ইটের গাঁথুনি দিয়ে নতুন করে ছাদ ঢালাই দেয়া হয়েছে। বালু ও সিমেন্টের আস্তরণ দেয়া বাকি। ঢাকার রাস্তার মালিক সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন। জায়গাটি পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) অধীনে। খবরে বলা হচ্ছে, এখানে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে ডিএনসিসি অবগত নয়। ঢাকা শহরে মোড়ে মোড়ে এ ধরনের কাঠামো তৈরি করতে গিয়ে রাস্তা সঙ্কোচনে পথচারী চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
ডিএমপি থেকে প্রকাশ করা খবরে জানা যাচ্ছে, ঢাকা শহরে ১০৭টি ট্রাফিক বক্স রয়েছে। এগুলোর একটা সংখ্যক স্থায়ীভবে নির্মাণ করা হয়েছে। শিয়া মসজিদ রোডে নির্মিত ভবনের মতো ট্রাফিকের জন্য রাস্তায় নির্মিত স্থায়ী অবকাঠামোর সংখ্যা ঢাকায় দ্রুত বাড়ছে। পুলিশের যুক্তি হচ্ছে, দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ বক্স অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সেখানে বিশ্রাম নেয়া যায় ও শৌচ কাজ চালানো যায়। এই স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে মূলত রাস্তা, সড়ক বিভাজক ও ফুটপাথ দখল করে। এতে রাস্তা সরু হচ্ছে, পথচারী চলাচলের জায়গা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এগুলোর কারণে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। পথচারীরা চলার পথ পাচ্ছে না। তারা বিরক্ত হচ্ছে। সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়ে এ ধরনের কয়েকটি পুলিশ বক্স গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তবে সিটি করপোরেশন এ কার্যক্রমে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। অস্থায়ী পুলিশ বক্সগুলো স্থায়ী কাঠামোয় রূপান্তর হতে দেখা যাচ্ছে সারা শহরে। এগুলো নির্মাণ সংস্কারে পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না।
রাস্তার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার যাত্রী ও পথচারীর। যান চলাচল মসৃণ করা, পথচারীদের চলাচল সহজ করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বও একই কাজে সেবা দেয়া। রাজধানীর সরু ঘিঞ্জি রাস্তায় যেভাবে ট্রাফিক পুলিশের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে উল্টো ট্রাফিকের সেবার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়ে যাচ্ছে। যেমন আমরা জাতীয় ক্ষেত্রে লক্ষ করছি। জনগণের জন্য সেবাদানকারী পুলিশ উপযুক্ত সেবা প্রদান না করে নিজেদের সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে নিচ্ছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের জন্য স্থায়ী অফিস করতে অসুবিধা হতো না যদি এখানে পর্যাপ্ত জায়গা থাকত। আমরা মনে করি, রাস্তায় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত যানবাহন ও পথচারীর। ট্রাফিকের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা যায় রাস্তা ও ফুটপাথের কোনো ক্ষতি না করে।


আরো সংবাদ



premium cement