প্রশাসন কি দেখছেন না?
- ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
কয়রা উপজেলা (খুলনা) থেকে নয়া দিগন্ত সংবাদদাতা জানালেন, কয়রা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাত্র এক শ’ মিটার দূরেই গড়ে তোলা হয়েছে এবিএম ব্রিকস নামের ইটভাটা যার বৈধ কাগজপত্রও নেই। পরিবেশ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও কার্যক্রম বন্ধ হয় না। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন লোকদেখানো অভিযান চালায়। তারা জরিমানাও করে থাকে। সবার অগোচরে সব মিটমাট হয়ে যায়। ৩১ বছর ধরে চলে আসছে অবৈধ এই ইটভাটা।
ইটভাটাটির পার্শ্ববর্তী স্থানে এর গা ঘেঁষে রয়েছে তকিম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অগ্রণী ও কৃষি ব্যাংকের শাখা অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর অফিসসহ একটি বাজারও।
ইটভাটার মালিক আমীর আলী গাইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আমাদি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার বাড়ির সামনে ফসলি জমিতে চলছে বড় গুঁড়ি জ্বালিয়ে ইট পোড়ানোর মহোৎসব। দুই মাস ধরে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে জায়গিরমহল গ্রামটি। গ্রামবাসী জানান, প্রায় তিন হাজার লোকের বসবাস এই গ্রামে। শুরু থেকেই ভাটা বন্ধ রাখার জন্য প্রতিবাদ করেছেন তারা। অনেকবার মানববন্ধনসহ লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে মুখ বুজে সহ্য করা হচ্ছে এই অত্যাচার। তারা অভিযোগ তোলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নদীর অপর পাশে দু’টি ইটভাটা বন্ধ। ক্ষমতার দাপট ও টাকার বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর ধরে ইটভাটাটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
আমাদি ইউনিয়নের নকশা গ্রামের পাশে কপোতাক্ষের চরে ১২ একর চর দখল করে সোহরাব ব্রিকস ফিল্ড, একরাম ফ্রিকস ও একেএস ফ্রিকস নামে তিনটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে, যার সবই অবৈধ। দখলবাজ মালিকদের ইটভাটা উচ্ছেদে উপজেলা প্রশাসনও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ড্রাম চিমনির এই অবৈধ ভাটাগুলোতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
হাফিজুল ইসলাম নামে একজন জানান, ভাটা থেকে ইট পরিবহনের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করছে বিকট শব্দ করা মাল ট্রলি। বিদ্যালয়গামী শিশু শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত। ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ভাটার নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি বেপরোয়া ট্রলি চলাচলের কারণে সড়কপথও বেহাল।
‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৯’ অনুযায়ী বিশেষ স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। এবিএম ব্রিকস এই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। এবিএম ব্রিকসের মালিক আমির আলী গাইন বলেন, আশপাশের উপজেলাতে ভাটা স্থাপনের অনুমতি নেই। পরিবেশের সার্টিফিকেটের জন্য অনেক আগেই আবেদন করে টাকা জমা দিয়ে রেখেছি। এলাকায় তেমন শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। ইটভাটার কারণে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তো হচ্ছে। মানুষের ভালো দেখতে পারে না কিছু মানুষ। তারা খোঁচায়।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে চোখ জ্বালাপোড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শ্বাসকষ্টসহ সমস্যায় ভুগতে হয়। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা লোকজনকেও ভুগতে হয় নানা সমস্যায়।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বলেন, হাসপাতাল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চরে বেআইনিভাবে কাঠ পুড়িয়ে ভাটাগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রশাসন সতর্ক থাকলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলতে পারত না। দ্রুত এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি। খুলনা পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটার কোনো বৈধতা নেই। খুব তাড়াতাড়ি ওই ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা