২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গাজায় গণহত্যা বন্ধে আইসিজের নির্দেশ ইসরাইলকে

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইঙ্গ-মার্কিন প্রত্যক্ষ মদদে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে। সেই থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্তে হোলি খেলছে ইসরাইল। ভয়াবহ মানবতাবিরোধী এই কর্মকাণ্ডের সমর্থক তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব ৭৫ বছর ধরে যার খেসারত দিতে হচ্ছে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের। দীর্ঘ এ সময়ে সাম্প্রতিককালে ফিলিস্তিনিদের ওপর গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। গত অক্টোবরের শুরু থেকে গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলার শুরু। গাজায় ১১২ দিন ধরে ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যার ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

এমন প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গাজায় গণহত্যা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে গাজায় অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়নি। আদালতের আদেশের পর কী ব্যবস্থা নেয়া হলো, তা এক মাসের মধ্যে আইসিজেতে জানাতে ইসরাইলের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইসিজের আদেশে বলা হয়, ইসরাইলকে অবশ্যই গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে।
গাজায় নির্বিচারে হামলা ও গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে গত বছরের শেষে আইসিজেতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি মাসের শুরুতে আদালতে মামলাটির দু’দিনের শুনানি হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, আদালত যেন জরুরিভিত্তিতে ইসরাইলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া জেনোসাইড (গণহত্যা) কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষার বিষয়টিও যাতে নিশ্চিত করা হয়। অন্য দিকে দখলদার ইসরাইল আন্তর্জাতিক এই আদালতকে মামলাটি সরাসরি খারিজ করে দিতে বলেছিল।

গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা সনদের আওতায় গণহত্যা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে। আইসিজের রায় ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে আন্তর্জাতিক অনেক মানবাধিকার সংগঠন মনে করছে। এই রায়ের ফলে ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় বিশ্ব ফোরামে কাজ চালিয়ে যেতে রায়টি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইসিজের রায় পালন বাধ্যতামূলক হলেও আন্তর্জাতিক এই আদালতের রায় মানতে ইসরাইলকে বাধ্য করতে না পারলেও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর গুরুত্ব রয়েছে যদিও আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় দিতে কয়েক বছর লেগে যাবে। শুক্রবারের রায়ের ফলে গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের কিছু সুরক্ষামূলক রক্ষাকবচ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রেক্ষাপট রচিত হলো। তবে ইসরাইল এ রায়ের তোয়াক্কা নাও করতে পারে। তার পরও কূটনীতিকরা এখন ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন উদ্যোগে কাজ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে কাতারের আমির কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে কাতার অংশীজনদের সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে।
বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মতো আমাদেরও দাবি, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বর্বর মানবতাবিরোধী অভিযান কালবিলম্ব না করে এখনই বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সাথে সাথে ইসরাইলের মদদদাতা মার্কিন প্রশাসনকে একচোখা নীতি পরিত্যাগ করতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত দাবি তাদের কাক্সিক্ষত স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবিকে পাশ কাটিয়ে যে সমাধানের চেষ্টাই করা হোক না কেন, তা হবে খুব ক্ষণস্থায়ী। একই সাথে ইনসাফের পরিপন্থী।


আরো সংবাদ



premium cement