২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজধানীতে বেড়েছে চার ধরনের অপরাধ

পুলিশের মনোযোগ কোথায়

-

রাজধানী শহর ঢাকায় বিপুল মানুষের বসবাস। এটি বিশ্বে জনসংখ্যার দিক দিয়ে অন্যতম বৃহৎ নগরী। কিন্তু আইনশৃঙ্খলার বেলায় অর্থাৎ নাগরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুর্বল অবস্থানে রয়ে গেছে। গণমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ হয়, রাজধানীতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন অনেকে। ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে কারো প্রাণও যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এ নগরীর নাগরিক নিরাপত্তাবলয় গড়তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ তেমন শক্ত ভূমিকা নিতে পারছে না। আসলে পুলিশের গাফিলতির কারণে এমন অবস্থা হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
ঢাকা শহরে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা সুশৃঙ্খল ও সংহত থাকার কথা, বাস্তবে তা নেই। বেশির ভাগ সময়ই থাকে ঢিলেঢালা। ফলে আগের বছরগুলোর তুলনায় এ মহানগরে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে গেছে। খোদ পুলিশের তথ্য-উপাত্তে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিগত তিন বছরের (২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত) তথ্য বিশ্লেষণ করে সহযোগী একটি দৈনিকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীতে চার ধরনের অপরাধ বাড়ছে। উল্লিখিত সময়ে ডাকাতি বা দস্যুতা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মতো অপরাধ বিগত তিন বছরে বেড়েছে।
ডিএমপির তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে ঢাকা মহানগরে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয় ২৩টি। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে মামলা সংখ্যা বেড়ে হয় ২৭টি। আর এর পরের বছর ২০২৩ সালে ডাকাতির মামলা হয়েছে ৩৪টি। দলবদ্ধভাবে মালামাল লুটের ঘটনায় অপরাধী পাঁচজনের কম হলে দস্যুতার মামলা হয়। ঢাকায় দস্যুতার ঘটনাও বেড়েছে গত তিন বছরে। ডিএমপির তথ্যমতে, ২০২১ সালে দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয় ১৪৫টি। পরের বছরও এই অপরাধে সমসংখ্যক মামলা হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯৯টি। পুলিশের ভাষ্যমতে, রাজধানী ঢাকায় ডাকাতি-দস্যুতার মতো অপরাধে জড়িত রয়েছে চার হাজার ৪৬১ দুর্বৃত্ত।
পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় গত ২০২১ সালে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬৩টি। পরের দুই বছর ২০২২ ও ২০২৩ সালে মামলা হয়েছে ১০৩টি করে। রাজধানী শহরে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সাথে জড়িত দুর্বৃত্তের সংখ্যা এক হাজার ৭৩৭।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ঢাকায় কেন ডাকাতি-দস্যুতা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মতো অপরাধ বাড়ছে? এ প্রশ্নের জবাবে সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, বিগত বছরগুলোতে পুলিশ বাহিনীকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দমনে যথেচ্ছ ব্যবহার করে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। এতে করে এই বাহিনী রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ কোনোটিই দিতে পারেনি। ফলে অপরাধীরা অপরাধ করার সুযোগ পেয়েছে।
নাগরিক সমাজের মতো আমরাও মনে করি, পুলিশ বাহিনীকে দেশের নাগরিক নিরাপত্তায় পূর্ণমাত্রায় নিয়োজিত করতে হবে। এটি তাদের মূল কাজ। এটি যদি করতে সরকার আন্তরিক হয়, কেবল তখনই সম্ভব হবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা। এতে অপরাধের মাত্রাও কমে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য সাঙ্ঘাতিক সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে বৈ কমছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement