২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেদার ধ্বংস করা হচ্ছে পাহাড়

প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে

-

প্রকৃতিকে রক্ষার দায়িত্ব মানুষ পালন করতে পারেনি। ফলে প্রকৃতি হয়ে উঠছে বৈরী। হাজির হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিপদ। পাহাড়-পর্বত পরিবেশের এক অসাধারণ দান। বিছানো ভূমির মধ্যে গেড়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো পেরেকের ভূমিকা পালন করে। রক্ষা করে প্রকৃতির ভারসাম্য। বাংলাদেশ একটি বিশাল ব-দ্বীপ। এর ৯০ শতাংশ এলাকা সমতল। তবে ১০ শতাংশ পাহাড়ঘেরা। পাহাড়ি এলাকা নয়নাভিরাম পর্যটনের উৎস। এটিকে আমরা যথেষ্ট মূল্য দিয়ে গড়ে তুলতে পারিনি। রক্ষা করা যায়নি স্বাতন্ত্র্য। নানাভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্যের আধার পাহাড়ি জনপদ। এর অনন্য প্রকৃতি অবাধে নষ্ট করা হচ্ছে। গাছপালা কেটে দেদার তৈরি করা হচ্ছে স্থাপনা। কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি। কর্তৃপক্ষ এগুলো রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশে টিলা এবং পাহাড় রয়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে এগুলো সাজিয়ে দিয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও আশপাশে জনবসতির নিরাপত্তায় এসব পাহাড় অক্ষত রাখা প্রয়োজন। বিগত কয়েক দশকে ভূমিদস্যুরা অবৈধ বসতি গেড়ে ও মাটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। নগরীর কেন্দ্র ও এর আশপাশে পাহাড়গুলোর অবস্থান হওয়ায় পরিবেশ আন্দোলনকারী ও সচেতন মানুষের দৃষ্টি এই পাহাড়ের ওপর থাকে। তারা পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে প্রায় রুখে দেয়ার চেষ্টা করেন। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী মৌজার ১০ দশমিক ৫১ একর জায়গাজুড়ে থাকা পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ চেয়ে ২০১৫ সালে রিট করে। এ এলাকার পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ আদালতে মোট ৩২টি মামলা হয়েছে। কিন্তু ১৫ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদফতরের একটি দল পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পায়, পাহাড় কেটে চারটি টিনের স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
উচ্চ ও নি¤œ আদালত কারো আদেশ গ্রাহ্য করা হয়নি। সরকারদলীয় স্থানীয় কাউন্সিলর প্রভাব খাটিয়ে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করছেন। তারা এতটা বেপরোয়া যে, নিজের দলের মন্ত্রী ও মেয়রের নিষেধের পরও কোনো পাত্তা দেন না। চট্টগ্রাম শহরে প্রায়ই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। এতে ঘরবাড়ি ধসে প্রাণহানির ঘটনাও বারবার ঘটছে। মূলত পাহাড় কাটায় ভারসাম্য হারিয়ে এমন বিপর্যয় ঘটছে। সারা দেশে পাহাড়সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে সরকারি দলের প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা না করে পাহাড় ধ্বংস করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তবর্তী কসবা উপজেলায় শতাধিক পাহাড় রয়েছে। সেখানে পাহাড়ের মাটি বিক্রি, স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অর্ধেকের চেয়ে বেশি তছনছ করে দেয়ার খবর আরো দুই বছর আগে পাওয়া গেছে। খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে দেখা যায়, পাহাড় কেটে ইটের ভাটায় নেয়া হচ্ছে। গাছপালা কেটে সমতল করে চলছে বসতি নির্মাণ। একই প্রবণতা দেশের প্রায় সব পাহাড়ি এলাকায়। কিছু জায়গায় প্রভাবশালী চক্র গভীর রাতে এ কাজ করছে। কিছু জায়গায় চলছে প্রকাশ্যে। প্রভাবশালীরা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সাথে সিন্ডিকেট করে পাহাড় বিনাশের কাজ করছে।
প্রকৃতিকে রক্ষায় সরকারের শক্ত অঙ্গীকার রয়েছে। কার্যক্ষেত্রে একে গুরুত্ব দেয় না। নিজের পোষ্যদের অবৈধ আয়ের জন্য পরিবেশ ধ্বংসকারী পদক্ষেপ থেকে ফেরায় না। মনে রাখতে হবে, পাহাড় কাটার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব আরো গভীর হবে। এ জন্য দেশের সবাইকে ভুগতে হবে। তাই পাহাড়খেকোদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমরা আশা করব, সারা দেশের প্রতিটি পাহাড় রক্ষায় সরকার সমন্বিত প্রকল্প নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement