২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি

দুষ্টচক্র ভাঙার উদ্যোগ নেই

-

দেশে কারসাজির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের একটি দুষ্টচক্র যেকোনো জিনিস বিশেষ করে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এটি এখন প্রমাণিত সত্য। এ বিষয়ে টাটকা একটি উদাহরণ হলো- কারসাজি করে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বাড়ানোর দায়ে দু’টি কোম্পানিকে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের জরিমানা করার মাধ্যমে। ওই দু’টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পারস্পরিক যোগসাজশে প্রতিষ্ঠান দু’টি এই অপকর্ম করেছে। গত বুধবার এই মামলার রায় প্রকাশ হয়েছে। প্রসঙ্গত, বাজারে কারসাজির মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়ানোর অভিযোগে ২০২২ সালে দেশের ১০টি পোলট্রি ফার্ম ও পোলট্রি-সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিসংক্রান্ত মামলায় আরো দু’টি প্রতিষ্ঠানকেও প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
দু’টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার বিষয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘কোম্পানি দু’টি পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়িয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে প্রতিযোগিতা আইনের ১৫ ধারায় এ দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ তবে কোম্পানি দু’টি এ রায়ের বিষয়ে আপিল আবেদন করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিযোগিতা আইনের ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিতরণ, গুদামজাতকরণ বা অধিগ্রহণসংক্রান্ত এমন কোনো চুক্তিতে বা ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আবদ্ধ হতে পারবে না, যা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে বা বিস্তারের কারণ ঘটায় কিংবা বাজারে মনোপলি অবস্থার সৃষ্টি করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, সাময়িক বিরতিতে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বিভিন্ন পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু সরকার এই দুষ্টচক্র ভাঙতে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি বা নেয়নি। কেন সরকার ব্যবসায়ীদের অশুভ চক্র ভাঙতে পারছে না; তা এক রহস্য। এ ক্ষেত্রে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে তার অসহায়ত্বের কথা গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন। আসলে বাস্তবতা হলো- বর্তমানে সরকারঘনিষ্ঠ কয়েকটি নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে গ্রাহকের পকেট হাতাতে সবসময় মুখিয়ে থাকে। সময় সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেয় চক্রটি। এতে সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে নিপতিত হয়। তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। কিন্তু বাজার নজরদারির জন্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আচরণ থাকে প্রশ্নবিদ্ধ।
বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, দেশে সুশাসন দুর্বল হওয়ায় এবং উৎপাদক ও ক্রেতাবান্ধব একটি বাজার-ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারায় মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। সরকারঘনিষ্ঠ হওয়ায় এই গোষ্ঠী অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের দৌরাত্ম্য এখন বিপুল শক্তিতে আবির্ভূত হয়েছে যা বর্তমানে দানবে রূপ নিয়েছে। এই দানবচক্র ভাঙতে না পারলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা যাবে না যদিও এই দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু বর্তমানে জবাবদিহিহীন শাসকশ্রেণীর কাছে এই প্রতিকার পাওয়া আপাতত সুদূরপরাহত। সঙ্গত কারণে বলা যায়, এই দুষ্টচক্র ভাঙার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement