২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজধানীতে উচ্চমূল্যের সড়কবাতি

বাড়াতে পারেনি নাগরিক সেবা

-

রাজধানী ঢাকা আয়তন ও জনসংখ্যায় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নগরী। এ নগরে বিশাল বিশাল অট্টালিকা নির্মিত হয়েছে। আছে জাঁদরেল নগর কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের তর্জন-গর্জন সত্ত্বেও নাগরিক সুবিধা সেকেলে। প্রকল্প নেয়া হয় বড় বড়, কাজের ফল অতি সামান্য। এ যেন পর্বতের মূষিক প্রসব। সহযোগী একটি দৈনিক এমন প্রকল্পের কথা জানাচ্ছে। শহরের আভিজাত্য বাড়াতে ইউরোপ থেকে সড়কবাতি আনা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দফায় দফায় উচ্চমূল্যের বাতি সংযোজন করা হয়েছে। বরাবরের মতো সরকারি কোষাগারের বিপুল অর্থ খরচ হলেও এতে রাস্তার অন্ধকার দূর হয়নি। এখনো মানুষ আলো-আঁধারিতে রাজধানীতে রাতে পথ চলেন।
ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় ইউরোপ থেকে ৪৮ হাজার ৮১২টি উচ্চমূল্যের এলইডি সড়কবাতি এনে লাগানো হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছিল ৩৬৯ কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। উন্নতমানের বাতি লাগানোর কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাসের মাথায় প্রায় চার হাজার বাতি পুরোপুরি নিভে গেছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাতি সচল রাখতে সেবা দেয়ার কথা ছিল। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এক কেন্দ্র থেকে সিস্টেমের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার কথা। বাতি জ্বালানো-নিভানো ও অকেজো হলে আপনা থেকে জানা যাবে। বাতির জন্য ১০ বছরের ওয়ারেন্টি ছিল। প্রথম পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের। বাতির আলো ৭০ শতাংশ নেমে এলে বদলানোর শর্ত ছিল। এগুলো ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কমাবে বলে যে আশাবাদ ছিল তার হিসাব সম্ভবত এখন কেউ করছেন না। সড়কবাতি সংযোজনের পর নাগরিকের হাঁটা-চলা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা নিয়েও আলোচনা নেই।
ঢাকা উত্তরে এর আগেও কয়েকটি সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রতি বাতি কিনতে খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ করেনি। ফলে সড়কবাতির প্রকল্প তেমন সফল হয়নি। অনেক জায়গায় সড়কে বাতি দেখা যায় না। আবার কিছু জায়গায় বাতি থাকলেও পর্যাপ্ত আলো দিচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, পাঁচ-ছয় মাস ধরে সড়কের বাতি নষ্ট। উত্তর সিটির কাউন্সিলরদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় এলইডি বাতি অকেজোর কথা জানানো হয়েছে। অনেক জায়গায় এলইডির বদলে সিএফএল বাতি লাগালেও সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো উত্তর সিটিতে সড়কবাতি সংযোজনের নামে উচ্চ ব্যয় হয়েছে। এর সুফল নাগরিকরা পাচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ দাম দিয়ে কেনা এসব বাতি সহজে নষ্ট হওয়ার কথা নয়। ঝড়-বৃষ্টি এমনকি বিদ্যুতের ভোল্টজের ওঠানামার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সড়ক আলোকিত করে রাখার কথা। এ ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় সামনে আসছে। প্রথমত, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শর্তানুযায়ী সেবা না পাওয়া এবং সিটি করপোরেশনের গাফিলতি। কেনাকাটার আগে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা রক্ষা না করা। এ জন্য করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসব প্রকল্পে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের দায় রয়েছে। অন্যদিকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে যে মনোযোগ দরকার ছিল তা সিটি করপোরেশন দেয়নি।
অথচ নগরে সড়কবাতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি রাতের জৌলুস বাড়ানোর পাশাপাশি পথচারীদের চলাচল সহজ করে। চুরি ডাকাতি ঠেকানোয় কাজে লাগে। শুধু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে বিপুল অর্থ খরচ করেও নগরবাসী উপযুক্ত নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল