দূষণমুক্ত চামড়া শিল্পনগরী দরকার
- ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:২৯
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে চায় সরকার। রফতানি বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার অনুসন্ধান করে প্রবেশে কীভাবে সহায়তা করা যায়, বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় থাকলেও দূষণমুক্ত চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা এখনো সম্ভব হয়নি। ফলে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির সম্ভাবনার পথে বড় অন্তরায় দূষণ।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দামে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। দূষণের কারণে মূলত এ সনদের জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও রফতানিতে অবস্থান শক্ত করতে পারছে না চামড়া খাত। অথচ কাঁচামাল না থাকার পরও তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ। গত অর্থবছর চার হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়। অন্যদিকে দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল থাকার পরও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি মাত্র ১২২ কোটি ডলার, যা তৈরি পোশাকের চেয়ে সাড়ে ৩৮ গুণ কম।
সহযোগী একটি দৈনিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্পকে দূষণমুক্ত পরিকল্পিত শিল্পনগরে স্থানান্তরে ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। ২১ বছরেও এ চামড়া শিল্পনগরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। যদিও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। চামড়া শিল্পনগর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। কঠিন বর্জ্য ফেলতে গড়ে তোলা যায়নি স্থায়ী ভাগাড় বা ডাম্পিং ইয়ার্ড। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিইটিপির সার্বিক কার্যক্ষমতা ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে। ফলে দূষণ থাকছে, যা ট্যানারিগুলোর আন্তর্জাতিক মান সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। এতে রফতানির সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ।
এই বাস্তবতায় বিশ্ববাজার ধরতে বাংলাদেশের চামড়া খাত এখনো প্রস্তুত নয় বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক মো: আবু ইউসুফ। তিনি মনে করেন, স্থানীয় উৎপাদকদের প্রণোদনা ও অন্যান্য সুবিধা দিলে হয়তো তাদের উৎসাহ বাড়বে। তবে পরিবেশ ও পণ্যের মানের ক্ষেত্রে বিদেশী ক্রেতারা ছাড় দেবেন না। এ জন্য সবার আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। সেটি করা গেলে অল্প সময়ের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি স্বল্পসময়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কোটি ডলারে নেয়া সম্ভব হবে।
বৈশ্বিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরচুন বিজনেস ইনসাইটসের তথ্যানুযায়ী, গত বছর চামড়া পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ছিল প্রায় ৪৬৮ বিলিয়ন বা ৪৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ইউরোপের বাজার ১৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের। ২০৩০ সালে এ বাজার বেড়ে ৭৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। তবে বৈশ্বিক বাজারে বর্তমানে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র দশমিক ২৬ শতাংশ। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, ইউরোপসহ অনেক দেশে জুতাসহ বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া কারখানার চামড়া ব্যবহারের শর্ত রয়েছে। ট্যানারিগুলোর সেই সনদ না থাকায় প্রক্রিয়াজাত প্রতি বর্গফুট চামড়া গড়ে ৮৫-৯০ সেন্টে রফতানি করছে। সনদ থাকলে দ্বিগুণ দামে এসব চামড়া ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা যেত। সেটি না থাকায় বাংলাদেশের চামড়ার বড় ক্রেতা এখন চীন।
চামড়া খাতের ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকদের মতো আমরাও মনে করি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি বাড়ানোর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। মূল বাধা দূষণ। দ্রুততম সময়ে চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর ও আধুনিকায়ন করতে হবে। পাশাপাশি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পিতভাবে করতে ডাম্পিং ইয়ার্ড লাগবে। তাহলেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি ধারাবাহিকভাবে বাড়বে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা