কাজ পাচ্ছেন না দিনমজুরও
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
সরকারি বয়ানে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উঠে এসেছি। কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হবে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দেশের এ অভূতপূর্ব উন্নয়নের সুবিধাভোগী কারা? বাস্তবে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে তা কেবল মুষ্টিমেয় মানুষের ভাগ্য ফিরিয়েছে; বাকি ৮০ শতাংশ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। গত সোমবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের ‘কামলার হাট’ বা ‘মানুষের হাটে’ তীব্র শীতেও অবস্থান করছিলেন চার শতাধিক কামলা। তারা মূলত কৃষিশ্রমিক। হাটে আসেন শ্রম বিক্রি করতে। কৃষিকাজ না থাকলে তারা যেকোনো কাজ করেন।
নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাজের সন্ধানে উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে এসেছেন তারা। গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহে এসব শ্রমজীবীর কাছে শীত যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এক দিকে কাজ নেই, প্রয়োজনীয় খাবার নেই, অর্থ নেই- অন্য দিকে মাঘের তীব্র শীতে মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই। না আছে গরম কাপড়, না আছে প্রাকৃতিক কাজ সারার নির্দিষ্ট জায়গা। কেউ সারা দিন প্রায় কিছু না খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন। অল্প কাপড়-চোপড়ে রাত কাটাচ্ছেন স্থানীয় কোনো বাসটার্মিনালে, ফুটওভার ব্রিজে, না হয় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বারান্দায়। ক্ষেত্রবিশেষে খোলা জায়গায়।
বছরের অন্য সময় এক দিন অপেক্ষা করলে কাজ জোটে। জেলার নানা স্থান থেকে গেরস্ত (কৃষিজমির মালিক), ঠিকাদারসহ মানুষজন চাহিদামতো শ্রমিক বাছাই করে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কাজে নিয়ে যান। মূলত এসব কৃষিশ্রমিককে যারা কাজ দেন, তারা থাকা-খাওয়াসহ শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। মানিকগঞ্জে এখনো বোরো ধান লাগানো শুরু হয়নি, সরিষাও পাকেনি। শীতে অন্য কাজ বন্ধ। তাই কর্মহীন এসব মানুষ প্রচণ্ড শীতে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানহীন অবস্থায় ভীষণ কষ্টে অমানবিক দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে পারছেন না অর্থাভাবে। অনেকে অভুক্ত অবস্থায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
তাদের অবস্থা বর্ণনাতীতভাবে করুণ। নাটোরের সিংড়া উপজেলার গুটিয়া মহিষমারি গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আবদুল খালেক বলেন, ‘পেটের তাগিদে কাজের জন্য আট দিন আগে এখানে এসেছি। প্রথম দু’দিন কাজ করেছি। এখন শীত বেড়ে যাওয়ায় গেরস্তের কাজ বন্ধ। ছয় দিন ধরে কাজ নেই। দিনে মাত্র একবেলা খাই।’ একই জেলার মানিকদীঘি গ্রামের মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘১৬ দিন আগে এসে মাত্র দু’দিন কাজ করেছি। খাবার নেই, টাকার অভাবে গ্রামেও ফিরতে পারছি না।’ নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার রিয়াঘাট গ্রামের মো: হোসাইন বলেন, ‘খিদের জ্বালায় একমাত্র সম্বল মোবাইল সেট মাত্র ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’
শুধু লোকদেখানো উন্নয়ন করে দেশের সব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না, হবে না। বড় বড় প্রকল্প নয়, সামগ্রিক অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তনে শ্রমঘন জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে এগোতে হবে। যাতে সবার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু তা হচ্ছে না। সে কারণেই আমাদের তরুণরা প্রতিদিন বিপুল সংখ্যায় দেশ ছেড়ে যাচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা