গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব কী
- ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নিষ্ঠুরতা সীমাছাড়া। কেবল সরকারের বিরোধিতা করায় অসংখ্য মানুষ নানাভাবে পীড়নের শিকার। প্রাণ ও সম্পদহানির ঘটনাও অহরহ ঘটছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকদের অধিকার রক্ষার বদলে সরকারের পীড়নযন্ত্রে পরিণত হয়েছে। দেশে যখন সব অপরাধ বেড়েছে, তখন রাজনৈতিক কারণে জেলে যাওয়া মানুষের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে ২৫ হাজারের মতো বিরোধী নেতাকর্মীকে জেলে যেতে হয়েছে। সংবিধান ও জেল কোড অনুযায়ী আচরণ পাচ্ছেন না তারা। এ নিষ্ঠুরতার দেখা মিলছে বন্দীদের নিকটাত্মীয় মারা যাওয়ার পর। অনেক ক্ষেত্রে প্যারোলে মুক্তির যে বিধান তা মানা হচ্ছে না।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল মৃধা ডাণ্ডাবেড়ি পরে বাবার জানাজায় অংশ নেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন আরো বহু নিষ্ঠুরতা বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বেলায় দেখা গেছে। এই অমানবিক কাণ্ড উচ্চ আদালতে উপস্থাপনের পর এবার কঠোর মন্তব্য করেছেন আদালত। বিচারক প্রশ্ন রাখেন, ওই আসামি কত মামলার আসামি? তাকে কেন ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আনতে হবে? বিচারক বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমরা হয়তো আনসিভিলাইজড (সভ্য নয়) হিসেবে (বিশ্বে) পরিচিত হবো।
বিরোধী নেতাকর্মীরা চোর ডাকাত নন, কিংবা তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ নেই। পুলিশ ও কারা প্রশাসন তাদের প্রতি এমন কঠোর মনোভাব দেখায় যে, তারা পালিয়ে গিয়ে সর্বনাশ করবেন। দেশে চোর-ডাকাত ও মুদ্রা পাচারকারী চক্র সর্বনাশ করে চলেছে; তাদের বিরুদ্ধে এমন কঠোরতা দেখা যায় না। এমন দৃষ্টান্ত নেই, বাবা-মায়ের জানাজায় গিয়ে বিরোধী দলের কেউ পালিয়েছেন। এর আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মায়ের জানাজায় অংশ নিতে ৩ ঘণ্টার জন্য মুক্তি পান বিএনপি নেতা আলী আযম। তাকে ডাণ্ডাবেড়ির সাথে হাতকড়া পরা অবস্থায় মায়ের জানাজার নামাজ পড়তে হয়। এই অমানবিক আচরণের জন্য সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। পুলিশের বক্তব্য, এটি কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। কারা কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর যখন এমন আইন কানুনের দোহাই দেয়, তখন আমরা জানতে পারি তারা নিজেরা ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের একটা বড় অংশ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘুষের অর্থসহ ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। সরকার এ চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নয়। সব ধরনের আইন প্রয়োগ বিরোধীদের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি কারাবন্দী যশোর জেলা যুবদলের নেতা আমিনুর রহমান মধুর বিরুদ্ধে নির্মম-নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত এই নেতাকে চিকিৎসা দেয়ার সময়ও ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া খোলা হয়নি। একজন সুস্থ মানুষও ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় অসুস্থ বোধ করেন। কারা কর্তৃপক্ষ একজন গুরুতর রোগীর প্রতিও মানবিক আচরণ করতে পারেনি।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে। পুলিশ ও কারা প্রশাসনের তোড়জোড় দেখে মনে হতে পারে; রাজনীতি করা ‘মহাপাপ’। এই দু’টি সংস্থার বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে বিচারালয়সহ রাষ্ট্রীয় অন্য সব প্রতিষ্ঠানের যেভাবে দাঁড়ানোর কথা বর্তমান সরকারের আমলে সেটি অনুপস্থিত। তাই রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায়ের কোনো প্রতিকার রাষ্ট্রের কোনো জায়গা থেকে মিলছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা