২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি

অভাবীদের সাহায্য করুন

-

আমাদের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ চরম দরিদ্র। তাদের থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয় তাদের। এ শ্রেণীর মানুষের সাহায্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ব্যক্তি মানুষও তাদের মুক্তহস্তে দান করেন। এই ইতিবাচক মানসিকতার সুযোগ নিয়ে ভিক্ষাকে ব্যবসা বানিয়ে নিয়েছে একটি শ্রেণী। ঢাকাসহ দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে। এদের কারণে প্রকৃত অভাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা কর্মসূচি নিলেও সেগুলো কাজে আসছে না।
সহযোগী একটি দৈনিকের খবর, রাজধানী ও আশপাশের জেলা শহরগুলোতে ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়েছে। সংসার ব্যয় নির্বাহ করতে ব্যর্থ হয়ে অনেক সক্ষম মানুষও ভিক্ষাকে বৃত্তি হিসেবে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তালিকায় প্রতিদিন অসংখ্য ভিক্ষুক যুক্ত হচ্ছেন। ফলে নাগরিক জীবনের সঙ্কট ও বিড়ম্বনা ভিক্ষাবৃত্তি আরো তীব্র করেছে। ভিক্ষুকের সংখ্যা নিয়ে নির্ভরযোগ্য জরিপ নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা সংখ্যার সাথে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ২০১৭ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা আড়াই লাখ, যা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ।
ঢাকা শহরের অলিগলিতে সারিবদ্ধভাবে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। বৃহত্তর ঢাকায় ভিক্ষুকের সংখ্যা তিন লাখের বেশি বলে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সারা দেশে এ সংখ্যা ৩০ লাখ হতে পারে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুমান। এদিকে ঢাকা শহরে ভিক্ষাকে পুঁজিহীন লাভজনক কারবার হিসেবে নিয়েছে একটি চক্র। কোটি বাসিন্দার শহরে মানুষের আবেগ পুঁজি করে এই অসাধু কারবার করা হচ্ছে। এটি করতে গিয়ে বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তির জন্য সারা দেশ থেকে এদের সংগ্রহ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোতে বসিয়ে দিচ্ছে চক্রটি। জনাকীর্ণ মোড়, প্রবেশপথ, ফ্লাইওভারে তাদের দেখা যায়। তাদের বিকৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংবেদনশীল অবস্থা দেখে মানুষ ভিক্ষা দেন। দিন শেষে এ অর্থ চলে যায় চক্রের হাতে। চক্রটি শহরকে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। একজনের এলাকায় অন্যজন ভিক্ষা করতে পারে না। রাজধানীতে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার ভিক্ষা বাণিজ্য হয়।
সমাজসেবা অধিদফতর রাজধানীর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেছে। যেমন বিমানবন্দরে ঢোকার চৌরাস্তা, হোটেল রেডিসনসংলগ্ন এলাকা, ভিআইপি রোড, কূটনৈতিক পাড়া, বেইলি রোডসহ কয়েক ডজন স্পট। রাস্তায় সমাজসেবা অধিদফতরের এ সংক্রান্ত সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। দেখা যাচ্ছে, এর আশপাশেও ভিক্ষুক রয়েছেন। সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে পেশাদার ভিক্ষুক আটক করেছে। তাদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। মূলত ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ঢাকায় যে চক্র গড়ে উঠেছে এর মূলোৎপাটন করা যায়নি। রাজধানীসহ বড় বড় শহরে একটি অসাধু চক্র গড়ে উঠেছে; এরা প্রকৃত ভিক্ষুক নন। তারা এটিকে স্রেফ অর্থ উপার্জনে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এর মাধ্যমে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক হয়েছেন; এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ চক্রকে প্রতিহত করা প্রয়োজন।
যদিও ভিক্ষাবৃত্তি অপরাধ না হলেও সামাজিকভাবে অসম্মানজনক। তবে যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত তাদের ভবঘুরে হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভবঘুরে নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় এদের পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে। এ আইনের কার্যকারিতা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে অভাবীদের সাহায্যের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অন্য দিকে প্রতারকদের চিহ্নিত করে তাদের নিবৃত্ত করা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement