২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাথরঘাটায় ইলিশের অভাব

জেলেদের হতাশা দূর করতে হবে

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বরগুনার পাথরঘাটাসংলগ্ন বিষখালী ও বলেশ্বর নদীতে মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। কেউ কেউ দু-একটি ইলিশ পেলেও তা বিক্রি করে খরচও উঠছে না। এ উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ নদীতে ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহসহ ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে থাকেন। মাছ না থাকায় অনেক জেলেই পেশা পরিবর্তনে ব্যস্ত।
সরেজমিন বিষখালী পাড়ে গিয়ে জানা গেছে, দিন এবং রাতে দুই দফায় নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে নৌকা নিয়ে ফিরছেন জেলেরা। সারা রাত ফেলা জালে যে মাছ উঠছে, তারা হতাশ। এ মাছ বিক্রি করে খরচই উঠছে না। অনেকেই নৌকা পাড়ে রেখে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
পাথরঘাটা উপজেলায় সরকার নিবন্ধিত জেলে ১৬ হাজার ৮২০ জন। অনিবন্ধিত আরো প্রায় সাত হাজার। বিষখালী নদীর জেলে মনির, রিপন, সরোয়ার ও হানিফ মিয়া জানান, ২৫ বছর ধরে বিষখালী নদীতে মাছ শিকার করে আসছেন। আয়ের উৎস নদীতে মাছ শিকার; এ দিয়েই পরিবারের খরচ মেটানো হয়। শৈশবে বাবা, চাচা ও মামাদের সাথে দলবেঁধে নদীতে মাছ শিকার করতেন। বার্ধক্যের কারণে মাছ শিকার না করায় নিজেরাই নদীতে মাছের খোঁজে রাত দিন পড়ে থাকলেও মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। ইলিশ না থাকায় একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধের পথে।
বলেশ্বর নদীর জেলে জাকির, আব্দুস ছালাম ও বেল্লালসহ অনেকেই জানান, দিন-রাত নদীতে মাছ শিকার করে ৩০০-৪০০ টাকার মাছ পেয়েছেন। পরিবারে একাধিক সদস্য রয়েছে; মাছ বিক্রি করেই সংসার চলে। এখন চিন্তা, কিভাবে সংসার চলবে? বাজারে দ্রব্যমূল্য হারে বেড়েছে, তাতে সংসারই চলছে না।
কালমেঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম নাছির জানান, এ ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার ২৮৬ জন জেলে রয়েছেন। প্রায় সবাই বিষখালী নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলেদের জালে খুবই কম মাছ ধরা পড়ছে। এতে খুবই দুর্দিন যাচ্ছে। এ নদী থেকে এমনভাবে মাছ বিলীন হয়ে যাওয়া আর দেখিনি। জেলেদের অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যে বরাদ্দ আসে, তা দেয়ার পরে বরাদ্দ না থাকায় জেলেদের সহযোগিতা করা যাচ্ছে না। জেলেদের মধ্যে জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার চাল দেয়া হলেও এর প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারতেন।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, নদীতে ইলিশ না থাকায় জেলে পরিবারগুলো দুর্দিন কাটাচ্ছে। জেলের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার উদ্যোগ নেয়া উচিত। জেলে পরিবারের মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে সমস্যা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারত। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জানান, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। বহু ডুবোচরে অনাব্যতার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে নদীগুলোর ইলিশ কমে যাচ্ছে। এভাবে মাছ কমতে থাকলে জেলেরা আর্থিক সঙ্কটে পড়বেন। নদীতে মাছ কম ধরা পড়ায় অনেক জেলেই হতাশ। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চেষ্টা করব সহায়তার জন্য।


আরো সংবাদ



premium cement