২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ফিলিস্তিনিরা নির্মূল হয়ে যাচ্ছে

মানবাধিকারের বালাই নেই

-


অন্যায়ভাবে একজন মানুষকে হত্যা মানে পুরো মানবতাকে হত্যা করা। একইভাবে একজন মানুষের প্রাণরক্ষা মানে পুরো মানবতাকে বাঁচিয়ে দেয়া। বর্তমান মানব সভ্যতা এমনই নীতিতে আস্থা রেখে একটি মানবাধিকার সনদ রচনা করেছে। সেখানে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে অপরাধ বিবেচনা করা হয়। বাস্তবে এর প্রয়োগে চরম পক্ষপাতিত্ব আছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন মানবাধিকার আইনের প্রয়োগে চরম ব্যত্যয় দেখা গেছে। এর সবচেয়ে বাজে উদাহরণ ফিলিস্তিনের জনগণ। তাদের জীবনের যেন কোনো মূল্যই নেই। তারা যেন মানুষ হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য নন। ক্ষতিকর প্রাণী নিধনের বেলায় মানুষ যেমন স্বাধীনতা ভোগ করে, ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যায় ইসরাইল একই ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করছে। টানা তিন মাস ধরে একতরফা নির্বিচারে তাদের হত্যা করে গেলেও মানবাধিকার রক্ষায় বৈশ্বিক শক্তিগুলো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিগত এক শতাব্দীতে ফিলিস্তিনিরা অব্যাহতভাবে তাদের বাড়িঘর থেকে উৎখাতের শিকার হয়েছে। পুরো দেশটিকে তারা বানিয়ে নিয়েছে একটি কারাগার, একটি বৃহৎ পীড়নকেন্দ্র। যেখানে ফিলিস্তিনিদের সব অধিকার অস্বীকার করা হচ্ছে। নিয়মিত বিরতিতে পৈশাচিক সামরিক অভিযানে হত্যা করা হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে ইসরাইল গাজায় এ ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তারা সেখানে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের একতরফা সামরিক অভিযান সমসাময়িক পৃথিবীর অন্য কোথাও ঘটানো সম্ভব নয়, যেখানে বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

এই হামলার ভয়াবহতা কেমন তা নিহতের সংখ্যা দেখলে আমরা অনুমান করতে পারব। ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজায় ১০ হাজার শিশুসহ প্রায় ২৩ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ। শিশু ও নারীসহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় বিশ্ববিবেক সাড়া দিচ্ছে না। ইসরাইল কোনো আইন মানছে না। হাসপাতাল ও আশ্রয়শিবিরেও তারা বোমা হামলা চালাচ্ছে। এ ছাড়া অধিকারকর্মী, সাংবাদিকরাও হত্যার শিকার হচ্ছেন। ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৭৭ সংবাদকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এ অবস্থায় গাজা নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছে ইসরাইল। তারা গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল করবে। এ লক্ষ্যে গাজার একটি অংশ সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। হামাসের সামরিক শক্তি নিঃশেষ করে দেয়ার অছিলায় গাজার বাকি অংশও ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।
এ অবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই। শক্তিধর দেশগুলো মানবাধিকারের কথা বললেও এগুলো কতটা ফাঁকাবুলি তা প্রমাণ হচ্ছে। আমেরিকার নীতি এ ক্ষেত্রে একেবারেই অন্যায্য। নতুন করে সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার সাথে সাথে দেশটি সামরিক শক্তি ও সমর্থন নিয়ে ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা ইসরাইলকে সব রকম সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু অসহায় ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। অন্য বৈশ্বিক শক্তিগুলো আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু বলার জন্য এ ইস্যুকে সুযোগ হিসেবে নেয়। বাস্তবে তারাও ফিলিস্তিনি জনগণের জান-মাল রক্ষায় শক্ত কোনো অবস্থান নেয় না। এ অবস্থায় বিশ্ব মানচিত্র থেকে ফিলিস্তিনিদের হারিয়ে যাওয়াই যেন নিয়তি।


আরো সংবাদ



premium cement