২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নতুন বছরে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

ইতিবাচক কিছু ঘটবে না

-

দেশের অর্থনীতি নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের মন্তব্য, ৩৬ বছরের কর্মজীবনে এমন সঙ্কট কখনো দেখিনি। গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে কার্যত এটি বর্তমান সরকারের অর্জন। রিজার্ভ তলানিতে, প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, রফতানিতে ভাটার টান, রাজস্ব আয়ের লক্ষ অর্জনে ব্যর্থতা এবং ব্যাংক খাতে সার্বিক ধস, বিপুল অঙ্কের অর্থ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয়ের ফলে বৈদেশিক ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়া এসব বর্তমান সময়ে অর্থনীতির বাস্তব চিত্র। মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রায় শূন্য, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগেও চলছে স্থবিরতা। লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করেও জ্বালানি খাতে কোনো অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে, কল-কারখানা বন্ধ হয়ে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।
নতুন সরকারকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। অনেকে আশা করছেন, টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ এবার অর্থনীতির হাল ফেরানোর দিকে মনোযোগী হবে। কিন্তু অর্থনীতির যারা বিশেষজ্ঞ তাদের মতে, বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে সরকারকে শক্ত চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। তারা বলছেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসা হবে নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রব্যমূল্য, মুদ্রা বিনিময় হার ও ব্যাংক ঋণের সুদের হারে মনোযোগ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ব্যাংক বা কোনো খাতে যেন কাঠামোগত সঙ্কট না হয়। আবার বৈদেশিক দায়-দেনা পরিশোধেও যেন কোনো সমস্যা দেখা না দেয়। বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করা কঠিন হবে।
কিন্তু ‘নির্বাচনের নৈতিক মানদণ্ডে দুর্বল’ সরকারের পক্ষে তা সহজ হবে না। নতুন সরকারকে দ্রুত কিছু সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, কিন্তু তার জন্য দরকার হবে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক প্রজ্ঞাময় একটি চৌকস অর্থনৈতিক টিম। মূলত ২০২৪ সালে সরকার কী ধরনের সংস্কার কার্যক্রম নিচ্ছে, এর ওপর নির্ভর করবে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি।
দেশে গত ১৫ বছরে ভীতির সংস্কৃতির কারণে অর্থনীতিবিদরা একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলেন। তার পরও কিছু সত্যের আভাস তারা দেন। ‘নির্বাচনের নৈতিক মানদণ্ডে দুর্বল’ সরকার এ বাক্যে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ইঙ্গিত আছে। রাজনৈতিকভাবে দুর্বল সরকার কখনো স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারে না। আওয়ামী লীগের দুর্বলতা কোথায় তা সবার জানা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটও সরকারের জন্য অনুকূল নয়। সবচেয়ে বড় কথা, ক্ষমতাসীন দলটির মানসিক গঠনপ্রকৃতি।
গত ১৫ বছরে দেশ বা জাতির জন্য সত্যিকার অর্থে দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণকর হবে এমন প্রকল্প বা কর্মসূচি আমরা খুব কমই দেখেছি। বরং জনগণের চোখে দৃশ্যমান উন্নয়নে তারা অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর দলটির মন্ত্রী, এমপি এমনকি স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বিপুল অর্থের মালিকে পরিণত হয়েছেন।
লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত অপরিমেয় অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিপুল ঋণখেলাপি অর্থনীতির ঘাড়ে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো চেপে বসে আছে। কোনো ব্যবস্থা নেই। এমতাবস্থায় নতুন সরকারের কাছে ভিন্ন কিছু আশা করার কী কারণ আছে, আমাদের বোধগম্য নয়।


আরো সংবাদ



premium cement