২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পুলিশ সদস্যদের অপরাধে জড়ানোর প্রবণতা

পুরো বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে

-

পুলিশ বাহিনীর কর্তব্য হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করা। এটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী। এর সম্পূর্ণ ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, গত দেড় দশক ধরে রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীকে রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে সরকার। বলা ভালো, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব পুলিশের দৈনন্দিন কর্মপরিধিতে আঁচড় ফেলেছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার চেয়ে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনে বেশি তৎপর বাহিনীটির সদস্যরা। এতে করে পুলিশের কাজকর্ম জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে পুলিশের কিছু সদস্য এমন সব ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন; যা পুরো বাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণœ বা খাটো করতে যথেষ্ট।
একটি সহযোগী দৈনিকের খবর, রাজধানীর উত্তরায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর ২০০ ভরি সোনা লুটের ঘটনায় পুলিশের তিন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। লুটের ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে। ওই ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ওই এসআইসহ পুলিশের আরো এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও এক সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) নেতৃত্বে সোনা লুটের ঘটনাটি ঘটেছে। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত একজনের মুঠোফোনের অবস্থান গাজীপুরের শ্রীপুর থানা এলাকায় শনাক্ত করে। পরে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ২৪ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি শ্রীপুর থানায় সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত। এএসআই গিয়াস উদ্দিন গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ চক্রে পুলিশের আরো দুই সদস্য ছাড়া আরেক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ।
লক্ষণীয়, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে? জবাবে বলা যায়- মূলত সরকার নিজেদের স্বার্থে অনেক সময় বিধিবহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীকে ব্যবহার করায় তারাও অবৈধ সুবিধা পেতে নিজস্ব মর্জিমাফিক কাজ করছেন। ফলে ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়তেও পিছপা হচ্ছেন না। দিন দিন এই প্রবণতা বাড়ছে বৈ কমছে না। তবে পুলিশের অপরাধপ্রবণতা না কমার আরো একটি কারণ হলো- এই বাহিনীর সদস্য যারা অপরাধ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়া।
সঙ্গত কারণে বলা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হয়ে এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধে জড়ালে তাদের বাহিনী থেকে বিদায় করা উচিত। যেখানে পুলিশসহ তদন্ত সংস্থার কাজ হচ্ছে অপরাধ দমন ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা; সেখানে পুলিশ সদস্য হয়ে যদি কেউ স্বর্ণ ডাকাতির মতো ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভাগীয় মামলার পাশাপাশি ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটি করা না গেলে বিধিবদ্ধভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীকে শৃঙ্খলায় রাখা খুব দুরূহ হবে। তাই সবার কল্যাণে পুলিশে শৃঙ্খলা অটুট রাখতে এই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যারা অপরাধে জড়িয়ে পড়বেন তাদের যেন কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement