২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাঠ্যবইয়ে ভুল, আপত্তিকর উপস্থাপনা

অমার্জনীয়

-

বছরের প্রথম দিন প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী নতুন বই পেয়েছে। তবে বাংলাদেশে নতুন বই মানেই যেন ভুলভ্রান্তির সয়লাব। আর কারিকুলাম নতুন হলে তো কথাই নেই। গত বছর থেকে নতুন কারিকুলামের বই দেয়া শুরু হয়েছে। এবার প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণী আর মাধ্যমিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন কারিকুলামে লেখা বই দেয়া হয়েছে। এসব বইয়ে নানা ভুলভ্রান্তি, বাক্যগঠনে অসঙ্গতির তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরও ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ২২টি বইয়ে ৪২১টি ভুলের সত্যতা পায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এবার সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে নতুন কারিকুলামের বইয়ে বানান, বাক্যগঠনে প্রচুর অসঙ্গতি দেখা গেছে। যদিও নতুন বইগুলো প্রণীত হয়েছে বাংলা একাডেমির বানানরীতি অনুসরণ করে। এছাড়া অষ্টম শ্রেণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে অনেকটা ‘খোলামেলা’ ভাষায়। যেখানে আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় যা খাপ খায় না তেমন অনেক শব্দ রয়েছে। যেগুলোর ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন অনেক শিক্ষাবিদও।
অষ্টম শ্রেণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে ‘কৈশোরের কথামালা’ অধ্যায়ে ১৬টি পৃষ্ঠা রয়েছে। এ অধ্যায়ে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট বয়সের পর ছেলে ও মেয়েদের কিভাবে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তা গল্প দিয়ে বোঝানো হয়েছে। গল্পের পর তাদের কুইজ-উত্তর লেখার অপশন রাখা হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরিবর্তনের এসব বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোকে স্বাগত জানালেও তা উপস্থাপনের ভাষা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তারা বলছেন, অধ্যায়টি কিশোর-কিশোরীদের বয়স উপযোগী হয়নি। এমনকি যেসব ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা আমাদের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার সাথে যায় না। তারা বলছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষা দেবো এটি যেমন ঠিক, তেমনই পাঠ্যপুস্তক যেন দেশের প্রেক্ষাপট, পরিবেশ পরিস্থিতি ও জনমানসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের একটি অধ্যায়ে বিষয়টি যে ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে, তা যথেষ্ট দৃষ্টিকটু ও আপত্তিকর। এসব অধ্যায় যখন একজন পুরুষ শিক্ষক মেয়ে শিক্ষার্থীকে পড়াবেন কিংবা একজন নারী শিক্ষক যখন ছেলেদের পড়াবেন তখন তিনি কি ক্লাসে পড়াতে পারবেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে।
এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান একটি নিউজ পোর্টালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে। এজন্য কিছু ভুল থাকতে পারে। ভুলগুলো চিহ্নিত করার পর সংশোধন করে আগামীতে আবার বই ছাপানো হবে। বড় ধরনের ভুল পাওয়া গেলে তা সংশোধন আকারে শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হবে। তারা ওই সংশোধনীর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবেন।
কিন্তু এই বক্তব্যের সাথে শিক্ষাবিদদের মতো আমরাও একমত নই। পাঠ্যবইয়ে কোনোরকম ভুল কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ, একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের শব্দ ও বাক্যগঠন সারা জীবন অনুসরণ করেন। সঙ্গত কারণে বলা যায়, বারবার এসব ভুল হওয়ায় যারা বানান বা বাক্যগুলো লিখেছেন বা দেখেছেন তারা যথাযথভাবে এগুলো দেখছেন না অথবা তাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। আমরা মনে করি পাঠ্যবইয়ে ভুল অমার্জনীয়।
আর যেকোনো বিষয়ে শিক্ষাদানের আমরা বিরোধী নই। তবে তা হতে হবে দেশীয় সংস্করণে। পাশ্চাত্যের অনুসরণে নয়।


আরো সংবাদ



premium cement