এর পুনরাবৃত্তি হোক
- ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
দৈনিক নয়া দিগন্তের কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, কুয়াকাটা রাখাইনপাড়ার খেনচান জানালেন, তাঁতবস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন রাখাইনরা। রাখাইন পরিবারে প্রচলন ছিল, মেয়েরা তাঁতের কাজ না জানলে বিয়ে হতো না। সুতার দাম কম ছিল, এখন শার্টের সুতা ৫০০ টাকা কেজি কিনতে হয়। বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। একটি শার্ট পিস তৈরি করতে তিন দিন লাগে। বিক্রি করা যায় ৫০০-৬০০ টাকায়। নিজের দোকানে বসে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছি। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, উপকরণের দাম বৃদ্ধি, বাজার সঙ্কট, প্রশিক্ষণের অভাব ও পুঁজি সঙ্কটে বন্ধ হওয়ার উপক্রম এ শিল্প।
পটুয়াখালী অঞ্চলের রাখাইন নারী তাঁতীদের চাদর, শার্ট পিস, ব্যাগ, শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছাসহ বস্ত্রের কদর রয়েছে। রঙ-বেরঙের সুতা দিয়ে হস্তচালিত তাঁতে তৈরি, কারুকাজ করা বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা। এ শিল্পের ওপর ভিত্তি করে প্রায় ১০ হাজার রাখাইনের জীবনে সুবাতাস বইছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, নৌঘাঁটি, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন ও পর্যটন কেন্দ্রের অনেক কাজ হয়েছে। এসব উন্নয়নের সুফলভোগী রাখাইন সম্প্রদায়ও। পণ্যের বিপণন, কর্মসংস্থান ও জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তাদের ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।
কলাপাড়ায় বসবাসরত ২৬টি রাখাইন পল্লীতে ৩১৮টি পরিবারে জনসংখ্যা এক হাজার ১৭৪ জন। বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, ধর্মীয় ঐতিহ্য, প্রথা ও উৎসব বাঙালিদের মুগ্ধ করে। একসময় জায়গা-জমি ও ধনদৌলতে সমৃদ্ধ ছিলেন রাখাইনরা। গড়ে তুলেছিলেন বড় বৌদ্ধবিহার (প্যাগোডা), শ্মশান ও পুকুর। পালিত হতো বৈশাখী পূর্ণিমা, চৈত্রসংক্রান্তি, নববর্ষে জলকেলি উৎসব, বিয়ে, বৌদ্ধবিহারাধ্যক্ষের শ্রাদ্ধ আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে। নানা সমস্যা, প্রতিযোগিতায় হোঁচট খেতে খেতে এ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমতে থাকে। ১৮৮৪ সালের পর থেকে পটুয়াখালীর গলাচিপা ও কলাপাড়া উপজেলার কালাচানপাড়া, গোড়া আমখোলাপাড়া, দিয়ার আমখোলাপাড়া, মংথরপাড়া, থঞ্জুপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, কেরানীপাড়া ও বরগুনার তালতলী উপজেলার ছাতনপাড়া, গোড়াঠাকুরপাড়া, মনুসেপাড়া, অংকোজানপাড়া ও তালুকদারপাড়ায় রাখাইনরা বসবাস শুরু করেন। গত শতকের চল্লিশ দশকে ২৪২টি রাখাইন পল্লøী ছিল। প্রবীণ রাখাইনরা জানান, সে সময় বরগুনা ও পটুয়াখালীতে ৬০ হাজারের বেশি রাখাইন বসবাস করতেন। বর্তমানে ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। বহু রাখাইনপাড়া বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বরগুনার তালতলীর ছাতনপাড়া, মনুসেপাড়া, সওদাগরপাড়া, তালুকদারপাড়া ও সোনাকাটা ইউনিয়নের কবিরাজপাড়া, নামিষেপাড়া ও অংকুজানপাড়ায় ১২ থেকে ১৪টি করে শতাধিক হস্তচালিত তাঁত রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় একই পরিবারে দুই থেকে তিনটি তাঁত রয়েছে। কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও গলাচিপায় রয়েছে দুই শতাধিক তাঁত। এসব তাঁতে ছয় শতাধিক নারী তাঁতী কাপড় বুনন করে থাকেন।
রাখাইনদের পরিবারের চাহিদা মেটাতে কাপড় বোনা হতো। বাণিজ্যিক পরিসরে এ কাজ শুরু করলে দেশব্যাপী কদর বাড়ে। রফতানি করতে না পারায় এবং সীমিতসংখ্যক ক্রেতা ও চাহিদার কারণে এ শিল্প বেশি দূর যেতে পারেনি। বর্তমানে পণ্যের প্রসার ঘটবে।
১৭৮৪ সালে আরাকান থেকে ৫০টি নৌকা নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ১৫০ রাখাইন পরিবার বাংলাদেশে আসে। আরাকানের ম্রাউ রাজবংশের শেষ সম্রাট থামাদার শাসনামলে (১৭৮২-৮৪) বর্মি শাসক বোধপায়া (শাসনামল ১৭৮২-১৮১৯) ক্ষুদ্র রাজ্যটিকে প্রায় ৩০ হাজার সেনা নিয়ে আক্রমণ করেন। বর্মি সেনাবাহিনীর নৃশংস অত্যাচার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে বাঁচার জন্য ১৫০টি পরিবার বাংলাদেশের উপকূলের দ্বীপে আশ্রয় নেয়। বনজঙ্গল পরিষ্কার করে আবাদি জমি সরকারের কাছ থেকে পত্তন করে নেয়। আদিবাসী ফোরামের বৃহত্তর বরিশাল আঞ্চলিক সভাপতি মংচোথিন তালুকদার জানান, এ অঞ্চলে বসবাসরত রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ার কারণ, কর্মসংস্থানের অভাব। সরকারের আন্তরিকতায় এ অঞ্চলের উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারব। রাখাইন নারীরা মান্ধাতার আমলের মেশিনে তাঁতের কাপড় তৈরি করতেন। শেখ হাসিনা সরকার ডিজিটাল মেশিন দিচ্ছে কাপড় তৈরির জন্য। অনেক রাখাইনপাড়ার নারীরা তাঁতের মাধ্যমে কাপড় বুনতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা