২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ড্রাগনে ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার

ফল সুরক্ষায় নজর দিন

-

প্রতিটি প্রাণীর আচরণ খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। তৃণভোজীরা নমনীয় হয়, মাংসাশীরা তুলনামূলক আগ্রাসী। পশুজগতের দিকে তাকালে এর প্রমাণ মিলে। তবে মানুষের জন্য খাদ্যের অসংখ্য বিকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মানুষ যদি ভারসাম্যমূলক খাদ্যতালিকা গ্রহণ করে, তার আচরণ তেমনি হয়। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত খাদ্য মানুষকে বড় ক্ষতির মুখে ফেলে না। বিজ্ঞান আজ সব খাতে পরিবর্তন এনেছে। এর কিছু রয়েছে নেতিবাচক। ভেজাল ও বিষ মিশ্রণ করে খাদ্য পচনরোধ ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে অধিক ফলনের হিড়িক পড়েছে। এর ওপর কর্তৃপক্ষ কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে তা মানব স্বাস্থ্যে ক্ষতি বয়ে আনছে।
হাইব্রিড খাদ্যশস্য বর্ধিত জনগোষ্ঠীর চাহিদা মিটিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই বর্ধিতকরণের প্রযুক্তি টেকসই নয়। দীর্ঘমেয়াদে প্রাণ ও প্রকৃতিতে খারাপ পরিণতি বয়ে আনছে। আজ বিশ্ব প্রকৃতি হুমকিতে পড়ার অন্যতম একটি কারণ এটি। ফসলের ফলন বাড়াতে গিয়ে সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ আমাদের মাছের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। খাল-বিল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশীয় মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। তবে এগুলোর হাইব্রিড ধরন আমরা পাচ্ছি। কৃত্রিমভাবে সেগুলো পালন করা হচ্ছে। উৎপাদনও হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু সেই মাছের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে কম। নেই আগের মতো পুষ্টিগুণ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এগুলো নতুন নতুন রোগের কারণ ঘটাতে পারে।

এখন উচ্চ ফলনশীল ফলের আগমন ঘটেছে। ফল স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশে বিভিন্ন জাতের ফল রয়েছে। এগুলোতে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার হয়। এখন প্রায় প্রতিটি ফলের এ সংস্করণ বাজারে রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এগুলোর আকার ঢাউস। কিন্তু খাদ্যমান ও স্বাদ কম। আগমন ঘটেছে বিদেশী ফলের। দেশে এখন বহু জাতের বিদেশী ফলের চাষ হয়। এসব ফল উৎপাদনে চাষিরা নিয়ম মানছেন কি না শক্ত তদারকি নেই। ফলে এগুলো কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে- এ বিষয়েও সঠিক জানা নেই। এমন একটি ফল ড্রাগন। এটি পূর্ব-এশিয়ার ফল হলেও আমাদের বাজারে প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। কিছু ড্রাগনের আকার ও রঙ নিয়ে কথা উঠেছে।
সহযোগী একটি দৈনিকের খবর, ফলটির আকার বাড়াতে হরমোন প্রয়োগ করা হচ্ছে। ড. ডনস টনিক নামে ওষুধটি প্রয়োগ করলে এটি ঢাউস আকার ধারণ করে। দেশে উৎপাদিত আকর্ষণীয় রঙের ড্রাগন ফলটি কয়েক শ’ গ্রাম ওজনের হতো। সেটির নজরকাড়া স্বাদ ছিল। উচ্চ চাহিদার বিপরীতে এর উৎপাদন বেড়েছে। তবে এক শ্রেণীর অসাধু চাষি অতিরিক্ত লাভের আশায় টনিকটি ব্যবহার করছেন। এটি আগের চেয়ে সস্তায় খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গায় পাওয়া যাচ্ছে। আগে লিটার ১০ হাজার টাকায় পাওয়া গেলেও এখন সেটি সাত হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এর ফলে বাজারে বিভিন্ন রঙের এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ঢাউস ড্রাগন মিলছে। এতে কারো সাময়িক লাভ হচ্ছে। মূলত এটি একটি হরমোন, এটি প্রয়োগে গাছ মরে যাওয়া ও ঠিকভাবে ফলন না হওয়ারও শঙ্কা থাকে। স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা তো আছেই। তারপরও এর ব্যবহার হতে পারছে। সীমান্তের অপর পার থেকে এটি দেশে ঢুকছে। অথচ টনিকটি পাঁচ দশক আগে ক্ষতিকর বিবেচনায় জাপানের কৃষিতে নিষিদ্ধ হয়।
কৃষিপ্রযুক্তি এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে- এর ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার। সামান্য অবহেলায় প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষের স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে। উন্নত দেশগুলো এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষতিকর কীটনাশক ও সার, এমনকি জৈবপ্রযুক্তি প্রয়োগের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ড্রাগনে ব্যবহৃত ক্ষতিকর টনিকটির ব্যবহার নিয়ে দ্রুত তদন্ত প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement