২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রেলক্রসিংয়ে ঝরে গেল চারটি প্রাণ

দুর্ঘটনা রোধে আন্তরিক প্রচেষ্টা নেই

-

আমাদের সড়ক, নৌ ও রেল- সব যোগাযোগের পথ অরক্ষিত। যাতায়াতে দুর্ঘটনা ঘটবে, প্রাণহানি হবে, এটি নিত্যকার নিয়তি। দুর্ভাগ্য হলো- এমন দুর্ঘটনা ঘটছে যা সহজেই এড়ানো সম্ভব ছিল। একই কারণে কিংবা একই স্টাইলের প্রতিনিয়ত পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। দায়িত্বশীল একটি জাতি একটি ভুল দ্বিতীয়বার করে না। নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও ফিটনেসহীন যানের কারণে বেঘোরে মানুষ মারা যায়। যখন একটি দুর্ঘটনা হয়, এ নিয়ে বহু কথা হয়। আবার আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। দেখা যায়, একই কারণে আবার কিছু মানুষের প্রাণ গেল। সড়ক ও রেলপথে একই রকমের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। এর মধ্যে রেলের লেভেল ক্রসিং একটি মৃত্যুফাঁদ। ক’দিন পরপরই আমরা দেখতে পাই, দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
গত সোমবার ময়মনসিংহ শহরতলির শম্ভুগঞ্জে একটি লেভেল ক্রসিংয়ে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি কমিউটার ট্রেন দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে একটি ট্রাককে। সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত বিবরণে গা শিউরে ওঠার মতো চিত্র এসেছে। ট্রেনটি সজোরে ট্রাককে পিষ্ট করার পর দেখা গেল নির্মম এক চিত্র। তিনটি লাশ ঝুলছিল ট্রেনের ইঞ্জিনে। আরেক জনের দেহ আটকে ছিল ট্রাকের সামনে। এই লাশগুলো নিয়ে ট্রেন আরো এক কিলোমিটার চলার পর থেমেছে। ট্রাকটি থেঁতলে গিয়ে দুর্ঘটনাস্থলের পাশে ছিটকে পড়ে।
নেত্রকোনা থেকে বলাকা এক্সপ্রেস ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাচ্ছিল। শহরে প্রবেশ করার আগে রঘুরামপুরে একটি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে এর সাথে ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। ট্রাকটি ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে দিয়ে ক্রসিং পার হচ্ছিল। কিন্তু লাইনের ওপর উঠে সেটি আটকে যায়। ওই ক্রসিংয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নেই কোনো গেটম্যান। অন্য দিকে, ট্রাকের চালক বেপরোয়া। সাধারণত এরা আইন-কানুন মেনে চলতে চায় না।
জানা যায়, ট্রেনে ঝুলে যাচ্ছিলেন যাত্রীরা। ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ হারানো আরোহীদের একজন ট্রাকের চালক হলেও বাকি তিনজন ইঞ্জিনে ঝুলন্ত ট্রেনের যাত্রী কি না, নিশ্চিত করে জানা যায়নি। দেশ অনেক উন্নত হওয়ার দাবি করা হচ্ছে। বাস্তবে ট্রেনের ইঞ্জিনে ঝুলে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা চলছেন। যাত্রীদের যেমন সচেতনতা নেই, সরকারের পক্ষ থেকেও নেই কোনো ধরনের পদক্ষেপ। রেলের ইঞ্জিনে সাধারণত বিনাপয়সায় গরিব লোকেরা ভ্রমণ করে থাকেন।
রেল দুর্ঘটনার বেশির ভাগ লেভেল ক্রসিংয়ে হচ্ছে। বাংলাদেশে রেলপথের দৈর্ঘ্য পর্যাপ্ত নয়। বহু এলাকায় এখনো রেলপথ নেই। তবে অপ্রতুল রেলপথে রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা অগুনতি। খবরে জানা যায়, রেলপথে মোট ক্রসিং দুই হাজার ৮৫৬টি। এর প্রায় অর্ধেক- এক হাজার ৩৬১টির কোনো অনুমোদন নেই। আবার এক হাজার ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের ৬৩২টির গেটম্যান নেই। তবে গেটম্যান রয়েছে এমন ক্রসিংয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, অবহেলা, গাফিলতি থেকে তা হয়। আবার নতুন নতুন ক্রসিং বানিয়ে নিচ্ছে অনেকে ইচ্ছেমতো। এগুলোতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৪০২টি রেল দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২২ সালে তা আরো বেড়ে ৬০০টি রেল দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য যদিও রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কোনোভাবেই মানা যায় না। কারণ এই দুর্ঘটনা একটু সচেতন হলেই এড়ানো যায়। মূলত সরকারি পর্যায় থেকে অবহেলা, গাফিলতি এর প্রধান কারণ। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর হলে অবৈধ রেলক্রসিং এক দিনে বন্ধ করে দেয়া যায়। অন্যদিকে, একান্ত প্রয়োজনীয় ক্রসিংয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠোর করা যায়। ময়মনসিংহের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হোক। নেয়া হোক উপযুক্ত ব্যবস্থা। রেলক্রসিংয়ে যেন আর একটি প্রাণও না যায়, সেই প্রত্যাশা আমরা করি।


আরো সংবাদ



premium cement
পটুয়াখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ভূমি কর্মকর্তা নিহত সাত কলেজের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে কেউ নিহত হয়নি, অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ ডিএমপির সিলেটে কর্মবিরতিতে ১১ হাজার চা-শ্রমিক, ক্ষতি ৬০ কোটি টাকা সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় গ্রেফতার সোহরাওয়ার্দীর পর কবি নজরুল কলেজও বন্ধ ঘোষণা কুলাউড়া রাস্তা জবর দখলের চেষ্টা : প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৭ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে গেলে আরো রক্তপাত হতো : আসিফ মাহমুদ দেবীগঞ্জে পরিত্যক্ত কাউন্টার থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড আদালতে আ’লীগ নেতার ওপর ডিম নিক্ষেপ, কারাগারে প্রেরণ

সকল