নিঃস্ব হচ্ছেন গরিবরা
- ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
পৃথিবী থেকে বৈষম্য ঘুচাতে সবচেয়ে বেশি আলোচনা সম্ভবত সমকালীন মানুষ করে। এ লক্ষ্যে বৈশ্বিক পরিসরে বহু সংগঠন ও আইন তৈরি করা হয়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও মানবাধিকার রক্ষার কথা নীতিবাক্য হিসেবে সবাই আওড়ান। কিন্তু বাস্তবে এ সময়ে মানুষের মধ্যে ধনবৈষম্য সবচেয়ে বেশি হারে ফিরে এসেছে। করোনা মহামারী ও যুদ্ধকে একদল লোক সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে ধন-সম্পদ বাড়াতে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন মতে, গত তিন বছরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি ধনবৈষম্য বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে মানবজাতির বড় অংশ নিঃস্ব হয়ে যাবে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের পর সারা বিশ্বে যত সম্পদ তৈরি হয়েছে, তার দুই-তৃতীয়াংশ বিশ্বের এক শতাংশ ধনীর ঘরে জমা হয়েছে। অন্য দিকে ৯৯ শতাংশ মানুষ পায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। গত দশকে যত সম্পদ তৈরি হয়েছে তার অর্ধেকের মালিক হয়েছে ১ শতাংশ ধনী। ‘সারভাইভাল অব দ্য রিচেস্ট’ শিরোনামে অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায়, মানুষের বিপদ ও দুর্বল অবস্থা কিভাবে পুঁজি বানানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মহামারী ও যুদ্ধ বাড়িয়ে দিয়েছে খাদ্য ও জ্বালানির চাহিদা। মানুষ হয়ে পড়েছে প্রযুক্তিনির্ভর। ২০২২ সালে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির প্রধান দুটি কারণ খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। এ সময়ে এই সংক্রান্ত বৈশ্বিক ৯৫টি কোম্পানি স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে দ্বিগুণ মুনাফা করেছে। সম্মিলিত মুনাফার পরিমাণ ৩০৬ বিলিয়ন ডলার। করোনার প্রাদুর্ভাবে ২০২০ সালে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর এই সুযোগ আসে। ঘরে বসে মানুষ অফিসের কাজ করেন, অনলাইনে চলেছে শিক্ষাকার্যক্রম। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সেই নির্ভরতা এখনো রয়েছে।
অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর বিশ্বে ৪২ ট্রিলিয়ন বা ৪২ লাখ কোটি ডলারের সম্পদ তৈরি হয়েছে। এর ৬৩ শতাংশ বা ২৬ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে এক শতাংশ ধনীর কাছে। ৩৭ শতাংশ গেছে বাদবাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে। সমাজের প্রান্তিক মানুষের হিস্যা তুলনামূলক আরো বেশি হারে কমেছে। দেখা যাচ্ছে, নিচের দিকের ৯০ শতাংশ মানুষের জনপ্রতি এক ডলার আয়ের বিপরীতে বিলিয়নিয়াররা আয় করছেন ১৭ লাখ ডলার। মুষ্টিমেয় মানুষের উচ্চ মুনাফা অর্জন অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতি ঘটিয়েছে।
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বের প্রায় ১৭০ কোটি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। অর্থাৎ মজুরি বাড়লেও তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। বিশ্বে এখন ৮২ কোটি মানুষ পেটে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যান। এর মানে, বিশ্বে দারিদ্র্য বেড়েছে। আমাদের দেশেও ২০২০ সালের পর মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে মধ্যবিত্তের একটি অংশ, নি¤œবিত্ত এবং দরিদ্রদের বিশাল অংশ পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না। বিপরীতে বৈশ্বিক প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে ধনীর সংখ্যা বেড়েছে আমাদের দেশেও। সমাজের ক্ষুদ্র একটি অংশ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের উদাহরণ টানা হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হন তিনি। লক্ষণীয়, তার মুনাফা জ্যামিতিক হারে বাড়লেও কর দিচ্ছেন নির্ধারিত সেই তিন শতাংশ হারে। অন্যান্য ধনীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এ অবস্থায় নিশ্চিত করে বলা যায়, ‘সমতা’র কথা বলা হলেও বর্তমান পৃথিবীতে এর বাস্তবায়ন নেই। প্রতিবেদন থেকে আমরা এ-ও জানতে পারছি, আফ্রিকার দরিদ্র দেশ উগান্ডার আটা বিক্রেতারা একই সময়ে ৪০ শতাংশ হারে আয়কর দিচ্ছেন। বাস্তবতা হলো-এ অন্যায্য বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার কোনো সমাধান আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
উচ্চ মুনাফার বিপরীতে উঁচু করারোপের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে পড়ে মানুষ মৌলিক চাহিদা জোগানের সামর্থ্য হারাচ্ছেন; এ ক্ষেত্রে ধনীদের ওপর বেশি করারোপ করে একটি ভারসাম্য আনা যায়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এক শতাংশ ধনকুবেরের ওপর এমন করারোপের জোরালো দাবি ওঠেনি। ধনী দেশগুলো এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে দরিদ্ররা কিছুটা হলেও নিস্তার পেতে পারেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা