২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
যশোরের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক

সরকারি টাকা পানিতে গেছে

-

তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং অনেকগুলো বাস্তবায়নাধীন। এগুলো আকার-আকৃতিতে যেমন বৃহৎ তেমনি দৃষ্টিনন্দন। বাইরে থেকে দেখলে যে কেউ ধারণা করতে বাধ্য, বাংলাদেশে বিশ্বমানের উন্নয়ন ঘটছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পরমাণু বিদ্যুৎপ্রকল্প, নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ পথ, পার্বত্যাঞ্চলে সম্পূর্ণ নতুন রেলপথ, উড়াল সড়ক, সরকারি বিভিন্ন দফতরের বিশাল বিশাল নিজস্ব নতুন ভবন, দেশজুড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি অসংখ্য উদাহরণ আমাদের সামনে, যেগুলো উন্নয়নের চাক্ষুস প্রমাণ।
এমনই একটি প্রকল্প যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির নামে স্থাপিত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কিছু বাড়তি প্রত্যাশা মানুষের থাকে। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ মনোযোগ থাকবে, এটি সুদক্ষ ও সুষ্ঠু পরিচালনায় তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণে অন্য সব প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এগিয়ে থাকবে ইত্যাদি। কিন্তু আলোচিত প্রতিষ্ঠানটির চিত্র ভিন্ন। গত বুধবার একটি সহযোগী দৈনিকে এ বিষয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে তাতে এই ভিন্ন চিত্রই উঠে এসেছে।
পার্ক প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য ছিল, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ও ব্যবসায় পরিচালনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপন। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে সরকার এখন স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, পার্কে পাঁচ হাজার কর্মসংস্থানের লক্ষ্য থাকলেও বাস্তবে হয়েছে দেড় হাজারের মতো। সেটিও প্রত্যাশিত মানের নয়। বেশির ভাগের বেতন-ভাতা এত কম যে, তাদের বেশির ভাগই অল্প সময় কাজ করে অন্য কাজে চলে যান। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের লক্ষ্য অর্জন হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন কতটা হয়েছে তা-ও বোঝা যাচ্ছে। ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পার্কে যে ৬১টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে তার মধ্যে সফটওয়্যার তৈরি বা বিপণন প্রতিষ্ঠান ১০টিরও কম। অন্য বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ই-কমার্স, কল সেন্টার, ইন্টারনেট সেবা, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় নিয়োজিত। এগুলোর জন্য সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক করার কোনো দরকারই ছিল না।
মজার খবর হলো- পার্কের দৈনন্দিন পরিচালনার ব্যয় উঠছে না। সে জন্য পার্কের অবকাঠামো ভাড়া দেয়া হচ্ছে- বিয়েশাদি, বৌভাত, সুন্নতে খৎনার মতো নানা অনুষ্ঠান আয়োজনে। ২০১৭ সালে উদ্বোধনের পর পাঁচ বছরে পার্ক থেকে আয় হয়েছে আট কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে সরকার পেয়েছে দুই কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ জনগণের পুরো টাকাই পানিতে গেছে বলা যায়।
আমরা বলি না, সরকারের সব বিনিয়োগ আর্থিক দিক থেকে লাভজনক হতে হবে। একটি খাতের উন্নয়ন ও বিকাশে সরকারকে ভর্তুকি দিয়েও অনেক বিনিয়োগ করতে হয়। সেই লক্ষ্য পূরণ হলে কোনো কথা থাকে না। অন্তত যশোরের এ পার্কের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।
পার্কের একজন বিনিয়োগকারী সংশ্লিষ্ট দৈনিককে বলেছেন, পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে তার মূল্যায়ন করে তারপরই সরকারকে এ ধরনের আরো পার্ক করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই ধরনের শ’ খানেক হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সরকারের আছে। চালু হয়েছে ১০টি। যখন দেখা যায়, এ ধরনের প্রকল্পে বিশেষ কোনো মহল লাভবান হচ্ছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট খাত বা সরকার সুফল পাচ্ছে না- তখন প্রকল্পের ঘোষিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বাইরেও অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে কি না, এমন সন্দেহ হয়। যশোরের পার্কটির পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে টেকসিটি নামের প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী, তাদের দেয়া হচ্ছে মোট রাজস্বের ৮২ শতাংশ। সরকার পাচ্ছে ১৮ শতাংশ। এটি স্বাভাবিক মনে হয় না।
সংশ্লিষ্টরা জানেন, ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগে বাংলাদেশ বিশ^মান তো দূরের কথা, সার্কের কোনো দেশের মানেও পৌঁছেনি। যশোরের এ সফটওয়্যার পার্কের মতো প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হলে স্মার্ট বাংলাদেশও একইরকম ভাগ্য বরণ করে কি না- সেটিই ভাবার বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement
ছাত্র সংঘর্ষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের উদ্বেগ কোনো পত্রিকা বন্ধে চাপ প্রয়োগ সহ্য করা হবে না : তথ্য উপদেষ্টা সিলেটে ব্যবসায়ী হত্যায় বাবাসহ ২ ছেলের মৃত্যুদণ্ড ভারতে মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় জামায়াতের প্রতিবাদ গুগল ম্যাপ দেখে গাড়ি চালাতে গিয়ে ব্রিজ থেকে পড়ে নদীতে, নিহত ৩ গাজীপুরে বেক্সিমকো শ্রমিকদের ফের মহাসড়ক অবরোধ ছাত্র সংঘর্ষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় জামায়াতের উদ্বেগ মালয়েশিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য সুখবর দিলো দেশটির সরকার আইএলও বাংলাদেশকে ৩ মিলিয়ন ইউরো দেবে মাঠে নামার আগেই ইনিংস ঘোষণা বাংলাদেশের একনেকে ৬ হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্পের অনুমোদন

সকল