২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
হাজারো কিডনি রোগীর পরিবার সর্বস্বান্ত

চিকিৎসায় খরচ কমানো উচিত

-

মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ যে কয়টি অঙ্গ রয়েছে তার মধ্যে কিডনি হচ্ছে অন্যতম একটি। সঙ্গত কারণে মানুষের কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে নানাবিধ অসুবিধা বোধ করেন আক্রান্ত ব্যক্তি। তাই অতি দ্রুত কিডনি রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আসতে হয়। আমাদের দেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল আবার চিকিৎসার সুযোগ অপ্রতুল। ফলে কিডনি রোগীর পরিবার ও স্বজনদের থাকতে হয় সব সময় মানসিক চাপে।
উদ্বেগের বিষয় হলো- দেশে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির নানা প্রদাহ থেকে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ হয়ে থাকে। এতে কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল ফিল্টার (ছেঁকে) করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়া। যখন কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়, তখন শরীরে বিপজ্জনক মাত্রার তরল, ইলেকট্রোলাইট ও বর্জ্য জমা হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের শেষ পর্যায়ে কিডনি বিকল হয়ে গেলে কৃত্রিম ফিল্টারিং (ডায়ালাইসিস) বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
কারো কিডনি বিকল হওয়া মানে, সেই ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তখন চিকিৎসাসেবা ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। যেহেতু কিডনি প্রতিস্থাপনে জটিলতা বেশি তাই ডায়ালাইসিস হচ্ছে সহজ পথ। কিন্তু অতি জরুরি এই চিকিৎসাব্যবস্থার বেহাল দশা আমাদের দেশে।
বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ নানাবিধ কিডনি রোগে আক্রান্ত বলে গত বছরের নভেম্বরে জানিয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি বছর ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয়। আরো প্রায় ২০ হাজার রোগী হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে যায়। এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই মৃত্যুবরণ করে। এর প্রধান কারণ ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন সুযোগের অভাব।
বেসরকারি পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে ডায়ালাইসিস করতে হয় এমন রোগী আছেন অন্তত ৫০-৬০ হাজার। কিন্তু চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন এর মাত্র ২০ শতাংশ। অর্থাৎ ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন। যারা সুযোগ পাচ্ছেন তারাও আছেন বহুবিধ ভোগান্তিতে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এ সেবা পর্যাপ্ত না থাকায় এবং ব্যয় বেশি হওয়ায় অনেকে ডায়ালাইসিস নিতে পারেন না। তারা যত দিন জীবিত থাকেন তত দিন তাদের ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকতে হয়। কেউ কেউ এ সেবা নিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন খরচের কারণে। ভিটেমাটি হারাচ্ছে বহু পরিবার। পরবর্তীতে এসব পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়ে মানবেতন জীবন-যাপন করছে। শুধু কিডনি রোগী নয়, এমন আরো কিছু অসংক্রমিত রোগ রয়েছে, যার চিকিৎসা ব্যয় আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে বাইরে।
কিডনি অকেজো রোগীদের ডায়ালাইসিস করানোর ব্যয় নিয়ে স্বজনদের কত পেরেশান থাকতে হয়, তার নমুনা আমরা দেখতে পাই গত কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। ডায়ালাইসিসের ফি বাড়িয়ে দেয়ায় রোগী ও তার স্বজনরা সেখানে প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন। তবে বিক্ষোভ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে বেদম মার খেতে হয়। চমেকে ডায়ালাইসিসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সর্বস্তরের মানুষ।
যেহেতু চিকিৎসা পাওয়া প্রত্যেক মানুষের মৌলিক পাঁচটি অধিকারের একটি, সেহেতু দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ভারের বেশির ভাগ রাষ্ট্রকেই বহন করা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো- জনস্বাস্থ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যয় করে থাকে বাংলাদেশ। গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, দেশের মানুষ তাদের চিকিৎসাসেবার ৭০ শতাংশ ব্যয় বহন করে নিজেরা। এমন বাস্তবতায় সরকারের উচিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়ালাইসিস সুবিধা বাড়ানো; যাতে সবাই স্বল্প খরচে এর সুবিধা নিতে পারে। প্রয়োজন হলে কিডনি রোগীদের জন্য ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। এর জন্য চাই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।


আরো সংবাদ



premium cement