২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মিয়ানমার জান্তাকে অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা

-

গত বছরের শেষ নাগাদ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে দুই হাজার গণতন্ত্রপন্থী প্রাণ হারিয়েছেন মিয়ানমারে। গত বছরের ডিসেম্বরে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ ছাড়া আরো আড়াই হাজার মানুষের প্রাণ গেছে সেখানে একই কারণে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জান্তা ক্ষমতা গ্রহণের পর এসব লোককে নির্মম কায়দায় হত্যা করে আন্দোলন দমন করে রেখেছে। এ দিকে দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে খবর প্রকাশ হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার অস্ত্র নির্মাণে সহায়তা পাচ্ছে কোনো না কোনোভাবে পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সরকারের। আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারের ব্যাপারে গণতান্ত্রিক বিশ্বের নীতি রোহিঙ্গা প্রশ্নে বড় দাগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আগেই। একটি সম্প্রদায়কে উৎখাত করার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের রক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। চীন, ভারত ও রাশিয়া তাদের সরাসরি সহযোগিতা করলেও পশ্চিমাদের বিরোধিতাও যে প্রকারান্তরে অকার্যকর এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের পক্ষে যাচ্ছে দ্য গার্ডিয়ানের এ খবরে তা বোঝা গেল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার অন্তত ১৩টি দেশের কোম্পানি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মিয়ানমারকে অস্ত্র তৈরির উপকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। তা ব্যবহার করে জান্তা নিয়ন্ত্রিত সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র কারখানায় সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র তৈরি করছে। পশ্চিমাদের সরবরাহ করা উপকরণ ও প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা অস্ত্র চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে ব্যবহার করছে। বিক্ষোভ দমনে সামরিক সরকার নারকীয় হত্যালীলা সংঘটিত করে প্রায়। বিক্ষোভকারীদের ঘরবাড়ি ও আত্মীয়স্বজন এবং বেঁচে থাকার উপায় উপকরণকে তারা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানায়। তারা প্রায় পাড়া মহল্লা ও জনবসতিতে ভারী অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে। রোহিঙ্গা নিপীড়নের ক্ষেত্রে বেসামরিক লোকদের ওপর এমন সামরিক হামলার ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। রাখাইন প্রদেশের সর্বত্র এ ক্ষতচিহ্ন এখনো রয়েছে। স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহ দমনে চালানো সামরিক অভিযানের স্টাইলে তারা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিক্ষোভ দমনেও ভারী অস্ত্রের ব্যবহার করে।
মিয়ানমারে এসব উপকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশের তালিকাটি দেখলে বিস্মিত হতে হয়। এ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশের নাম। এ দেশগুলোকে উন্নত গণতন্ত্রের চর্চাকারী হিসেবে বিশ্ববাসী জানে। এমনকি তারা সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সমাদৃত। এগুলো সরবরাহের তালিকায় চীন ও রাশিয়ার নাম রয়েছে। দেশ দু’টি গণতন্ত্রের সমর্থক, পৃষ্ঠপোষক নয়। গণতন্ত্র রক্ষায় তাদের কোনো অঙ্গীকার নেই। রাশিয়া ও চীন বৈশ্বিক পর্যায়ে সরাসরি মিয়ানমারের দুর্বৃত্তায়নের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। উভয় দেশকে এই সময়ে প্রতিযোগিতা করে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া সম্প্রতি দেশটিতে বড় ধরনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। তারা সমরাস্ত্র সরবরাহ ও উৎপাদনে তাদের সাথে চুক্তি করছে। চীনের সাথে এমন গভীর সম্পর্ক তাদের আগে থেকে আছে। অপর দিকে ইসরাইলের বৈশ্বিক পর্যায়ে বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তারা যেকোনো অপশক্তিকে সাহায্য করতেই পারে। ভারতকে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ বলা হলেও কার্যত প্রতিবেশী দেশগুলোতে তারা গণতন্ত্র চর্চায় উৎসাহিত করে না। দেশটিকে অন্যান্য প্রতিবেশী দ্বিধা সন্দেহের চোখে দেখে। রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দেশটি একবারের জন্য গণতন্ত্র রক্ষায় কোনো ধরনের দৃশ্যমান অবস্থান বা প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেনি।
মিয়ানমারে অস্ত্র তৈরির উপকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহের খবরটি যাচাই করা হয়েছে। ফাঁস হওয়া বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তৈরি করা একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। দেশগুলো সরাসরি মিয়ানমারকে এটি সরবরাহ করছে এমন বলা হয়নি। এসব দেশের বিভিন্ন অস্ত্র উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সেটা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশেষ করে গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক দেশগুলো থেকে কিভাবে এ সরবরাহ আসে? যেখানে এসব সরকারের নীতি হচ্ছে মিয়ানমারের জান্তার অপরাধ সংঘটন বন্ধ করা এবং অভিযুক্তদের বিচার করা। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত করার জন্য এক দিকে জোরালো কথা বলা, পেছনে তাদের দেশ থেকে তাদের অস্ত্র উৎপাদনে সহায়তা করবে- বিষয়টি এক ধরনের ধোঁকাবাজি। বিষয়টি অচিরেই তদন্ত করা দরকার। মিয়ানমারকে এমন সহায়তা বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল