২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শান্তির বাজারে অশান্তির আগুন

নির্বাচনী পরিবেশ কেমন হবে

-

‘রংপুরে ভোটের জেরে বাড়ি, দোকান ও খামারে তাণ্ডব’ শিরোনামে গতকাল নয়া দিগন্তের শেষ পৃষ্ঠায় একটি খবর ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘নির্বাচন হয়ে গেছে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর। কিন্তু তার জের রয়ে গেছে এক বছর পরও। সেই জেরে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি নজিরবিহীন তাণ্ডবের অভিযোগ উঠেছে। লুটপাট হয়েছে বাড়িঘর, দোকান, মাছের খামার, গবাদিপশু ও আসবাবপত্র।’
ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার মধ্যরাতে। খবরের বিস্তারিত পড়ে বারবার মনে হতে থাকে, আমরা আদৌ কোনো সভ্য সমাজে বাস করি কি? সভ্য সমাজে তো সামাজিক রীতি-নীতি, আইন-কানুন, বিচার-আচার ইত্যাদি থাকার কথা। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সমাজের মানুষ একমত হয়ে এসব নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান প্রণয়ন ও অনুসরণ করেন। দেশ থেকে সেসব নিয়ম-নীতি উঠে গেছে কি না এমন সংশয় জাগে উল্লিখিত খবরটি পড়লে। খবরে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার মধ্যরাতে রংপুরের বদরগঞ্জের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বিজয়ী মেম্বার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মাজেদের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা এ বর্বর তাণ্ডব চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
মাজেদের সমর্থক ৫০-৬০ জনের একটি দুর্বৃত্ত দল দেশী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বদরগঞ্জের বুজরুক বাগপাড় সরকারপাড়া শান্তির বাজারের দোকানপাট ও আশপাশের বসতবাড়ি, কৃষি খামারে বেপরোয়া তাণ্ডব চালায়। সবচেয়ে বেশি ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেছেন, মাজেদ মেম্বার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার বাড়িতে লুটপাট ভাঙচুরের নির্দেশ দেন। জয়নালের ছেলে শাহ আলম জানান, ঘটনার সময় পুলিশকে বারবার আমরা ডেকেছি। কিন্তু পুলিশ গিয়ে শান্তির বাজার এলাকায় অবস্থান করেছে। তারা রাস্তা থেকে নামেনি।
পুলিশের এ ভূমিকার অর্থ হলো, তারা জেনেশুনে দুর্বৃত্তদের বাধা দেয়নি। জনগণের জানমালের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশ পালন করেনি। স্থানীয় পুলিশের ওসি অবশ্য পরিস্থিতি নিজে নিয়ন্ত্রণে এনেছেন বলে দাবি করেছেন। সেটিই নিয়ম। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে পুলিশের অথবা অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তার অবস্থা কী হয় তার ভূরিভূরি দৃষ্টান্ত আমরা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানতে পারি।
কিন্তু রংপুরের এ ঘটনার সামাজিক দিক বিবেচনা করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়। আমরা আর সম্ভবত নিজেদের সভ্য বলতে পারি না। ১৫০০ বছর আগে আরবের লোকেরা ঠিক এমনই ছিল। তারা বছরের পর বছর ধরে গোত্রীয় রেষারেষি ও বৈরিতা লালন করে গেছে, পরস্পরের ওপর হামলা করেছে, রক্তের বদলা নিয়েছে রক্ত নিয়ে। সেটিকে বলা হয় আইয়ামে জাহিলিয়াত। অন্ধকার যুগ। বর্তমান বাংলাদেশে আমরা সেই অন্ধকার যুগে ফিরে গেছি বললে খুব কি বাড়িয়ে বলা হবে?
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখনকার বাংলাদেশে কেমন থাকে সেটি ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়কার অভিজ্ঞতা স্মরণ করলে স্পষ্ট হবে। ওই বছর নির্বাচনের আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সেই সময়ের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি দলের লোকজনের মনোনয়ন বাতিল করছে, অন্য দলেরটা করছে না। শুধু এক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ আমরা দেখছি না।’ তখন ওই সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে এবং এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি প্রতিষ্ঠানটির নেই।’
আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হতে হবে বলে এখন দেশ-বিদেশের সবাই সোচ্চার। এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কথা বলছেন কূটনীতিকরা এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রভাবশালী দেশগুলো। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের কথায় বা আচরণে এমন কোনো লক্ষণ দেয়া যাচ্ছে না যে, তারা অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের মুখের কথা যে বিশ^াসযোগ্য নয় এটি আগেই প্রমাণিত। অবাধ নির্বাচনের জন্য বিরোধীদের চাওয়া বাস্তবে পূরণ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement