২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর

দু’দেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হোক

-

আন্তর্জাতিক বিশ্বের নজর এখন ঢাকার দিকে। এ আগ্রহ সৃষ্টির পেছনে বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিরও ভূমিকা আছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতার অভাব, জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে ব্যত্যয়, সুশাসনের অভাব, নিপীড়নমূলক সামাজিক পরিবেশ এখনকার বাংলাদেশের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে যে বিষয়টি সেটি হলো- শাসনকাজে জনগণের অংশগ্রহণ ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে যাওয়া। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়াই এর কারণ।
এই বিশেষ কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্ব, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বের মনোযোগ এখন বাংলাদেশের দিকে নিবদ্ধ। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করে গেলেন। এ সফর উপলক্ষে দেশে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এটি সরকারের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তেমনি বিরোধী দলের জন্যও। কারণ, লুর সফরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রসঙ্গ অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করা হচ্ছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ, শ্রম অধিকার, নিরাপত্তা সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক দরপত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে বলেও ধারণা করা হয়। সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, আর্থিক ও পণ্য সরবরাহ খাতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলাসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যু। বিরোধী দলের আগ্রহের কারণ- সরকারের নিবর্তনমূলক নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ তাদের জন্য স্বস্তিকর আবহ সৃষ্টি করতে পারে। তবে লুর সফরের ফল তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব নয়। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে সেটি ক্রমে স্পষ্ট হতে পারে।
আমাদের বলার কথা এই যে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যত কিছুই বলা হোক না কেন, দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে এটি প্রাথমিক শর্ত। আর এ সম্পর্ক রক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে আমাদের মতো দেশের পক্ষে এগোনো প্রায় অসম্ভব।


দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশীদের দ্বারস্থ হওয়া বা তাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করার বিপদ সম্পর্কে আমরা সচেতন। তবে বিষয়গুলো যদি অন্যায় অযৌক্তিক বা গণবিরোধী না হয়ে দেশের জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট হয় তাহলে ঘটনাটি ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, বাকস্বাধীনতা, অবাধ নির্বাচন, জবাবদিহির মতো বিষয়গুলো জনস্বার্থসংশ্লিষ্টই শুধু নয়; আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এসব বিষয়ে আমাদের যে অপূর্ণতা আছে তা নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। বিদেশীরা যদি জনগণের এসব অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে, তাহলে আমরা জনগণের সদস্য হিসেবে তাতে কোনো দোষ দেখি না; বরং গণতন্ত্র মুক্তির স্বার্থে স্বাগত জানাব।
দেশের অর্থনীতি এখন চাপের মুখে। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ না পেলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। এমনই অবস্থায় বাংলাদেশকে ঋণ দেয়া যায় কি না সেই বিষয়টি মূল্যায়নের জন্য ঢাকায় এসেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। তিনি কিসের ভিত্তিতে এই মূল্যায়ন করবেন সেটিও এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ। তার মূল্যায়নের উপকরণ হলো সংস্থাটির দেয়া শর্তগুলোর বাস্তবায়ন। আর শর্তের মধ্যে উল্লেøখযোগ্য যে দিক রয়েছে সেগুলো সুশাসনের সাথে জড়িত।
সরকার ১৫ বছর ধরে সুশাসনের নিয়মগুলো অনুসরণ করেনি। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে এখন যদি সুপথে আসে তাহলে হয়তো চরম দুরবস্থায় পড়ার আশঙ্কা আমরা এড়াতে সক্ষম হবো। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচব। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ধরনা দেয়ার যে গ্লানি তা আর আমাদের মনকে বৃশ্চিক দংশনে যন্ত্রণাবিদ্ধ করবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কোনো পত্রিকা বন্ধে চাপ প্রয়োগ সহ্য করা হবে না : তথ্য উপদেষ্টা সিলেটে ব্যবসায়ী হত্যায় বাবাসহ ২ ছেলের মৃত্যুদণ্ড ভারতে মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় জামায়াতের প্রতিবাদ গুগল ম্যাপ দেখে গাড়ি চালাতে গিয়ে ব্রিজ থেকে পড়ে নদীতে, নিহত ৩ গাজীপুরে বেক্সিমকো শ্রমিকদের ফের মহাসড়ক অবরোধ ছাত্র সংঘর্ষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় জামায়াতের উদ্বেগ মালয়েশিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য সুখবর দিলো দেশটির সরকার আইএলও বাংলাদেশকে ৩ মিলিয়ন ইউরো দেবে মাঠে নামার আগেই ইনিংস ঘোষণা বাংলাদেশের একনেকে ৬ হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্পের অনুমোদন ভোটাধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব

সকল