সবার অধিকার সুরক্ষিত হোক
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে বিরোধীরা সরকারের পক্ষ থেকে বাধাবিপত্তি ও চাপের মুখে পড়ছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা উন্মুক্ত করে দেয়ার পরও কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। পুলিশের গুলিতে বিরোধী দলের আটজন নিহত হয়েছেন। স্বাধীনভাবে কর্মসূচি পালন করার অধিকার দমিয়ে রাখার কোনো ধরনের কূটকৌশল বাদ দিচ্ছে না সরকার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটসের বার্ষিক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক চাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এর মধ্যেই বিরোধীদের ওপর দমনপীড়নও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠনটি দাতাগোষ্ঠী ও কৌশলগত অংশীদারদের আরো বেশি সংযুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। যাতে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে নির্ভয়ে বাংলাদেশীরা নিজেদের মত প্রকাশ করতে এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের নভেম্বরে সুলতানা আহমেদ নামের বিরোধীদলীয় এক নেত্রীকে র্যাব গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওই বছরের সেপ্টেম্বরে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিরোধী দল বিএনপির বিরুদ্ধে গত বছর ২০ হাজার মামলা হয়েছে, যার বেশির ভাগই অজ্ঞাতনামা। এসব মামলাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিরোধী দলের সদস্যদের বাড়িতে অভিযান চালাতে ওয়ারেন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে। সাথে খড়গ হিসেবে ঝুলছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। যে কাউকে এ আইনে আটক করে হেনস্তা করা সরকারের জন্য সহজ। এই অবস্থাকে সংস্থাটি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন হিসেবে অভিহিত করেছে। দেশীয় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে, বিদায়ী বছরে সারা দেশে ৪৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৭০ জন নিহত ও ছয় হাজার ৯১৪ জন আহত হন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে দুই হাজার ২৪৯টি।
সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকারসংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুতর বিষয়টি ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম। এ ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটির শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেন। জাতিসঙ্ঘ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারিশের আলোকে এর একটি সুরাহায় তিনিও কিছু দিকনির্দেশনা দেন। সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া এবং গুম হওয়াদের খোঁজ ও মুক্তির বিষয়ে সেখানে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছিল। গুম হওয়া ৭৬ জন মানুষের তালিকা সরকারের কাছে জাতিসঙ্ঘ হস্তান্তর করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ বছরের প্রতিবেদনে অভিযোগ করছে, র্যাবের ব্যাপারে সংস্কারের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল তার পরিবর্তে সরকার অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। তবে সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাব ও এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা কমেছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এগুলো কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে র্যাবের মধ্যে সংযত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ফলে মানবাধিকার-কর্মীদের অভিযোগের সত্যতা মিললেও বিষয়টি ইতিবাচক। উদ্বেগের ব্যাপার হলো; গত বছরও এ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। আসকের হিসাবে, গত বছরেও ১৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে র্যাব চারটি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১৫ জন নিহত হন। অপহরণ গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন পাঁচজন।
মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সরকার শুধুমাত্র সব অভিযোগ খারিজ করে পরিস্থিতি উতরাতে চাইছে। গত বছর দেখা গেছে, সরকার বিদেশে থাকা ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপরও চড়াও হয়েছে। তাদের তৎপরতা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি তালিকা তৈরি করেছে। কারো বিরুদ্ধে দেশে মামলা হয়েছে। আবার দেশে থাকা তাদের স্বজনদের হয়রানির বিষয়টিও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
আমরা মনে করি, প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত হওয়া দরকার। এটি নিজেদের প্রয়োজনেই। আমরা যদি এগুলো সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে না পারি তাহলে কেউ নিরাপদ থাকবো না। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা