জনদুর্ভোগ আরো বাড়বে
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
এবার গ্রাহক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো ৫ শতাংশ; যা কার্যকর করা হয়েছে চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে। সর্বশেষ ২০২০ সালের মার্চে খুচরা দাম বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বিইআরসি। এটি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো।
বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে প্রথমবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়াল সরকার। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নিজের হাতে নিতে বিইআরসি আইন সংশোধন করে গত ১ ডিসেম্বর অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সংশোধনের সময় বলা হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে দাম বাড়ানো হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো-বর্তমানে দেশে কী ধরনের বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যাতে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হলো? সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা নেই। অথচ এই ব্যাখ্যা জানার অধিকার রাখেন বিদ্যুতের গ্রাহকরা।
বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎনীতি শুরু থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। এর কারণ, সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বা জনগণের কল্যাণে উচ্চমূল্যের চাপ থেকে মুক্ত করতে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে না। অথচ দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে বিনা দরপত্রে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এতে এক দিকে সরকারঘনিষ্ঠ একশ্রেণীর ব্যবসায়ীকে টাকা বানানোর সুযোগ দেয়া হচ্ছে, অন্য দিকে জনগণের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ সরকার পছন্দের ব্যবসায়ীদের দিচ্ছে। পাশাপাশি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ফলে জনগণের ঘাড়ে দামের বোঝা বেড়ে যাবে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহর নয়া দিগন্তে দেয়া মন্তব্যটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেখানে ৩-৪ শতাংশের বেশি বিদ্যুতের সিস্টেম লস হওয়ার কথা নয়, সেখানে সিস্টেম লস হচ্ছে ১০ শতাংশ। সিস্টেম লসের নামে প্রতি বছর দুই হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। কিন্তু এসব বন্ধ করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তার মতে, ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করে ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো এবং বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা হলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না, বরং আরো কমে যেত।
এমনিতে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো কতটা বিবেচানাপ্রসূত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই দুর্দিনে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অর্থ হলো জনদুর্ভোগ আরো অসহনীয় করা। দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে মুষ্টিমেয় মানুষ ছাড়া বাদবাকি সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। বাধ্য হয়ে সবাইকে ব্যয়সঙ্কোচন নীতি অবলম্বন করতে হয়েছে। তবু জীবন চালানো দায় হয়ে উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের মতো গণজ্বালানির দাম বাড়ানোর সরল মানে হলো সাধারণ মানুষকে আরো বেকায়দায় ফেলে দেয়া।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, সরকারের উচিত বর্তমান বিদ্যুৎনীতিতে পরিবর্তন আনা। রেন্টাল, কুইক রেন্টালের মতো বিতর্কিত নীতি বাদ দিয়ে দেশে মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা। সেই সাথে সিস্টেম লসের নামে চুরি বন্ধ করা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা