অর্থনৈতিক কূটনীতির সফলতা নেই
- ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বৈদেশিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রধান খাদ্যপণ্য চাল এখনো আমরা আমদানি করছি। অন্য কিছু খাদ্যপণ্য বিভিন্ন মাত্রায় আমাদের এখনো আমদানি করতে হচ্ছে। তেল, গম, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ প্রধান খাদ্য উপাদান আমাদের প্রতি বছর বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। অথচ বর্তমান সরকার দাবি করে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমদানি বাণিজ্য ঘাটতির যে তথ্য দিচ্ছেন মন্ত্রী সেখানে পাওয়া যাচ্ছে বিরাট ফারাক। বিশেষ করে আমাদের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাথেই আমাদের বাণিজ্য একেবারে ভারসাম্যহীন। কূটনৈতিক অর্থনীতিকে সরকার নীতি হিসেবে জোর ঘোষণা দিলেও কাজের ক্ষেত্রে তার বাস্তবতা দেখা যায় না।
সংসদে দেয়া তথ্য অনুযায়ী বছরে চালের চাহিদা তিন কোটি ৫২ লাখ টন, উৎপাদিত হচ্ছে তিন কোটি ৫১ লাখ টন। গমের চাহিদা ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার টন, উৎপাদন হয় ১০ লাখ ৮৬ হাজার টন। ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ টন, উৎপাদিত হয় মাত্র দুই লাখ ১৭ হাজার টন। দুধের চাহিদা এক কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার টন, উৎপাদিত হয় এক কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টন। পেঁয়াজ হয়ে উঠছে একটি ব্যতিক্রমী পণ্য। এটি ছাড়া বাঙালির রসনা অচল। তেমনি এর উৎপাদন ও ভারত থেকে আমদানি নিয়ে রয়েছে এক রহস্য। দেখা যায়, ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ এসে সয়লাব হয়ে যায় দেশের বাজার। এতে দেশীয় উৎপাদকেরা দাম পান না। তাদের লোকসান গুনতে হয়। অন্য দিকে পরিসংখ্যান বলছে, চাহিদার তুলনায় দেশের পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি। পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন, উৎপাদন হয় তার চেয়ে আরো ১০ লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় পচে গিয়ে প্রতি বছর চাহিদার ঘাটতি দেখা দেয়। বছরের পর বছর এমনটি হচ্ছে কিন্তু এ ব্যাপারে টেকসই কোনো উদ্যোগ নেই।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৩০.৯৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রধান বন্ধু দেশ চীন ও ভারতের সাথে ঘাটতির পরিমাণ ২৯.৫২ বিলিয়ন ডলার। চীন থেকে আমদানি করা হয় ১৮ হাজার ৫০৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, রফতানি করা হয় মাত্র ৬৮৩ দশমিক ৪৩ ডলারের পণ্য। দেশটির সাথে বাণিজ্য ঘাটতি ১৭ হাজার ৮২৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে আমদানি করা হয় ১৩ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। রফতানি করা হয় মাত্র এক হাজার ৯৯১ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি ১১ হাজার ৬৯৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় ৫৪৭টি পণ্য চীনে রফতানির সুযোগ পায় বাংলাদেশ। গত বছরে এ সুবিধা আরো ৩৮৩টি পণ্যের ব্যাপারে যুক্ত হয়ে মোট ৮ হাজার ৯৩০টি পণ্যে এ সুবিধা পাচ্ছে। কার্যত এর বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে না। ভারতের বাজার সবসময় বাংলাদেশের জন্য প্রতিকূল। অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে পণ্যের রফতানি ঠেকিয়ে দেয়া হয়। পাটের ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে বারবার অনুরোধ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সাথে চীন, ভারত দুটো দেশের সম্পর্ক নিবিড়। ভারত ও চীন সময় সময় ঘোষণা দিয়ে সেটা প্রকাশও করে। ভারতের সাথে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো ঝুলে রয়েছে। বিশেষত পানিপ্রাপ্তি ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে কোনো অগ্রগতি নেই। অন্য দিকে, চীন বাংলাদেশে কিছু বিনিয়োগ করেছে। এর কিছু কিছু সুফল রয়েছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে রফতানি বেড়ে গেছে বহুগুণ। বাণিজ্য সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও চীনে আমাদের রফতানি বাড়ছে না। এ অবস্থায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো বিচার বিশ্লেষণ ও যাচাই করা দরকার। দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বের মাত্রা নির্ধারণ হওয়া দরকার প্রাপ্তির ভিত্তিতে। শুধু ঘোষণা আর ভালো ভালো কথা দিয়ে বন্ধুত্ব হয় না। অর্থনৈতিক কূটনীতির সফল প্রয়োগ চায় দেশের মানুষ যাতে এর সুফলভোগী হতে পারে জনসাধারণ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা