২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পবিত্র রজমান আসন্ন

পণ্যের সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা

-

আগামী মার্চের শেষ সপ্তাহে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই রোজার মাসে নানা ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। এ জন্য প্রতি বছর সরকারি পর্যায়ে এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়। পণ্যের বাজারে যাতে কোনোভাবে ঘাটতি না থাকে এবং দাম বেড়ে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর। তার পরও ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন প্রতি বছর। এবার রোজার আগে দেশের অর্থনীতিতে বেশ টানাপড়েন আছে। তাই আশঙ্কারও কারণ আছে।
রমজানে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, খেজুর, চিনি, গুঁড়াদুধসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানি সহজ করতে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে এলসি খোলা সহজতর করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৭ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রী আমদানিতে এলসি মার্জিন ছাড় দিতেও বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গণমাধ্যমে এমন খবর আসছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সব আমদানিকারক এলসি খুলতে পারছেন না। কিছু বড় আমদানিকারক ওই সুবিধা পাচ্ছেন। ছোট আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ডলার সঙ্কটের অজুহাতে এলসি খুলতে গড়িমসি করছে। সব আমদানিকারক সমান সুযোগ না পেলে ভোগ্যপণ্যের আমদানি, সরবরাহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কব্জায় চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে তারা সিন্ডিকেট করে ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃৃষ্টি করবে এবং একতরফা দাম বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেবে এমন আশঙ্কাই বেশি।
এলসি খোলার পর পণ্য আমদানিতে সাধারণত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। তাই এই মুহূর্তে এলসি খোলা না গেলে রোজার আগে পণ্য আসা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ফলে এবারের রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যে ঘাটতি এবং একই সাথে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
ডলার সঙ্কটের কারণে গত বছরের এপ্রিল থেকে আমদানির রাশ টেনে ধরেছে সরকার। গত ডিসেম্বরে নতুন এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ কমে ৪ বিলিয়নে নেমে এসেছে। এতে ডলারের খুব সাশ্রয় হয়েছে এমন নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলারের মজুদ এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। তার ওপর বিভিন্ন সঙ্কটাপন্ন ব্যাংককে প্রতিদিনই প্রচুর ডলার ঋণ দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
এই বাস্তবতা কেবল গণমাধ্যমের জল্পনায় উঠে এসেছে তাই নয়। সম্প্রতি ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বৈঠকের আলোচনায়ও রোজার আগে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
এ অবস্থায় কোনো ব্যবসায়ী কোনো ব্যাংকে এলসি খুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই ব্যবসায়ীকে সাহায্য করবে এমন কথাও বলা হয়েছে। সুতরাং পরিস্থিতি কতটা নাজুক সহজেই বোধগম্য। এ অবস্থায় বাণিজ্যমন্ত্রী যদিও বলছেন, দেশে নিত্যপণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে। সরবরাহেও ঘাটতি নেই। রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। তবু সতর্কতা জরুরি। সব আমদানিকারকের জন্য এলসি খোলার সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি। সেই সাথে রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর বাজার নজরদারি শুরু করা দরকার।
রমজানে রোজা রেখে মানুষ যেন কোনোরকম ভোগান্তির মধ্যে না পড়েন সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement