২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শিক্ষার দায়িত্ব এখন কাদের হাতে

অনিয়ম দুর্নীতি চলছে ফ্রি স্টাইলে

-

শিক্ষা প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে অনিয়ম দুর্নীতি প্রবেশের খবর পুরোনো। এখন মনে হচ্ছে, এর প্রতিটি বিভাগ কাবু হয়ে গেছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তির কাছে। শিক্ষা বিস্তার ও এর মান উন্নয়নের বদলে এটি অনেকের জন্য অবৈধ সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার একটা মাধ্যম। গতকাল মঙ্গলবার একটি সহযোগী দৈনিকের প্রথম পাতায় শিক্ষা প্রশাসনসংক্রান্ত পৃথক দুটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। একটিতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি চক্র বিপুল অঙ্কের অর্থ কাজ শুরুর আগে হাতিয়ে নিয়েছে। অন্য খবরে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারের একেবারে শীর্ষ ব্যক্তির এলাকায় তার উপস্থিতিতে চলছে অনিয়ম। এ ঘটনাগুলো আমাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, সরকার শিক্ষার ব্যাপারে কতটা গাফেল ও অমনোযোগী।
পত্রিকাটি লিখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৬০ উপজেলায় আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প নিয়ে ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এটি এখনো অভিযোগ আকারে থাকলেও তদন্ত এড়িয়ে যাওয়ার অপকৌশল লক্ষণীয়। চতুরতার সাথে তদন্ত বিলম্ব করে অভিযোগ থেকে বেঁচে যাওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে তারা সফল হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রকল্পটির কাজ বাগিয়ে নেয় মন্ত্রণালয়ের ভেতরের বাইরের মিলিত একটি চক্র। কাজ সম্পন্ন না করে অগ্রিম তারিখ দেখিয়ে কাগজপত্র বানিয়ে নেয় তারা। এ কাজে তারা ২৪ জন উপঠিকাদার দেখায়। এ দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগ পেয়ে এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করার জন্য পাঠায়। সচিব মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। পরে দেখা গেল, মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তাকে বদলি করে দেয়া হয়েছে। এরপর বন্ধ হয়ে যায় তদন্ত কার্যক্রম। আবার এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা কেউ কিছু বলতে নারাজ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানানো হলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তদন্ত কাজটি পরিত্যক্ত হতে চলেছে।
আরেকটি অনিয়মের ঘটনা দেখা যাচ্ছে, খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের এলাকায়। তার ছেলের বউভাতের অনুষ্ঠান ছিল গত রোববার। এ উপলক্ষে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারীর সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষকরা স্কুল বন্ধ করে সবাই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তাদের সাথে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত হন। চিলমারিতে ৯৩টি, রৌমারিতে ১১৫টি ও রাজিবপুরে ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব ক’টি ছুটি ঘোষণা করা হয়। পত্রিকা জানাচ্ছে, সব শিক্ষক ও কর্মচারীকে সেখানে যেতে বলা হয়। তাদের জন্য ৫০০ টাকা চাঁদা ধার্য করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সারা বছর মিলে প্রধান শিক্ষক দুর্যোগের কারণে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন দিন ছুটি ঘোষণা করতে পারেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার জন্য এভাবে ২৬৫টি স্কুলই এক সাথে বন্ধ রাখার ঘটনা নজিরবিহীন। এর আগে রাজনৈতিক কারণে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো ব্যক্তি আসবেন এমন কর্মসূচিতে ছাত্রদের যোগ দেয়ার জন্য স্কুল বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা নিয়মিত আমাদের দেশে ঘটে। এসব নিয়ে সমালোচনা থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম যেনতেন কারণে বন্ধ রাখার কর্তৃপক্ষীয় সিদ্ধান্ত বাতিল করতে সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।
পাঠ্যপুস্তক ছাপা নিয়ে অবহেলার বিষয়টি এখন আলোচনায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও সময় মতো উদ্যোগ গ্রহণের অভাবে শিক্ষা বছরের শুরুতে শিশুদের হাতে বই তুলে দেয়া যায়নি। এ ছাড়া পুস্তকে আগের বছরে ত্রুটি রয়ে যাওয়া ও নতুন বছরে ছাপা বই ও এর কাগজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্য দিকে শিক্ষা প্রশাসনে দুর্নীতি, সেটা অন্যান্য বিভাগের মতোই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এর এমন কোনো একটি উপখাতও নেই যেখানে দুর্নীতি অনিয়মমুক্ত এমনটা বলা যাবে। বর্তমান সময়ে দেশে নৈতিক অবক্ষয়ের যে সয়লাব তাতে আমাদের শিক্ষাও ডুবে যাচ্ছে। সরকারের উচিত ছিল এ বিভাগকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা। এতে করে জাতির ভবিষ্যৎ আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এই দূষিত পরিবেশ কোনোভাবে একজন নীতিবান সৎ মানুষ তৈরির জন্য উপযুক্ত নয়।


আরো সংবাদ



premium cement