পাথর শ্রমিকদের জীবন সংগ্রাম সহজ করুন
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ঢাকায় পাঠানো এক প্রতিবেদনে দৈনিক নয়া দিগন্তের পঞ্চগড় সংবাদদাতা এবার জানিয়েছেন, একনাগাড়ে সাত দিন ধরে পঞ্চগড়ে প্রতিদিন গড়ে ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ প্রতিদিনই পাথর শ্রমিকরা মহানন্দা নদীর ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলে বাঁচার লড়াই করছেন। তারা তুলছেন নদী থেকে নুড়িপাথর। জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রচণ্ড শীতে নদী থেকে নুড়িপাথর তুলতে হচ্ছে তাদের। সংসারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সকাল-সন্ধ্যা প্রতিদিন বরফশীতল পানিতে ডুবে তারা পাথর তোলেন। জীবিকার তাগিদে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে নামেন নদীতে। সারা দিনে তোলা পাথর সন্ধ্যায় মহাজনের কাছে বিক্রি করেন, যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। এই চিত্র দেশের সর্ব-উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার ভারত সীমান্তঘেঁষা বহুলালোচিত মহানন্দা নদীর পাড়ের মানুষের।
পঞ্চগড় জেলার সর্বোত্তরের তেঁতুলিয়া উপজেলায় জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ। তার প্রায় অর্ধেকই পাথরশ্রমিক। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী, মহানন্দা, এই নদী হাজার হাজার পাথর শ্রমিকের জীবিকা অর্জনের বিশাল ভাণ্ডার। প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বা সিএফটি নুড়িপাথর তোলা হয় এখানে। পাথর তোলার আগে শ্রমিকরা হিমশীতল পানিতে হাওয়ায় ফুলানো ট্রাকের টিউব, লোহার ‘জাকলী’, চালুনি ও রড নিয়ে নদীতে নামেন। তারা বিরতিহীনভাবে দিনভর পাথর তোলেন। তারপর হাওয়ায় ভাসানো টিউবের ‘ঢাকি’তে করে তোলা পাথর নদীর কিনারে এনে জমা করেন। তারা সন্ধ্যাবেলায় পাথরের মহাজনের কাছে তা বিক্রি করেন। এভাবে প্রতিজন শ্রমিক সারা দিনে ৫০০-৭০০ টাকা উপার্জন করেন, যা দিয়ে তাদের সংসার কোনো মতে চলে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার সরদার পাড়া, রণচন্ডি, বারঘরিয়া, তীরনই, খয়খেটপাড়া, বাংলাবান্ধা, সিপাইপাড়া, দর্জিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে পাথর শ্রমিকদের সাথে কথা হয়েছে। পাথর শ্রমিকরা বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমাদের রিজিক মহানন্দা নদীর বুকে পাথরের মধ্যেই রেখেছেন।’ মহামারী করোনার পর থেকে সম্প্রতি তেঁতুলিয়ার অনেক জায়গায় পাথর তোলা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই মহানন্দা নদীতে পাথর তুলে শ্রমিকরা কোনো রকমে ডালভাত খেয়ে এখন জীবন পার করছেন। তাদের প্রশ্ন : ‘যত ঠাণ্ডাই পড়–ক, পাথর না তুললে সংসারের খরচ আসবে কোথা থেকে? আমরা পরিবার চালাব কিভাবে?’ পাথর শ্রমিক তাহেরুল জানান, তার পরিবারের সদস্য সাতজন। পরিবারের সব সদস্যের প্রয়োজনীয় খরচ তাকেই বহন করতে হয়। তাই ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলতে হয়। আরো দুই শ্রমিক জহিরুল ও হাবিব বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলি, তবু অসুখ-বিসুখ হয় না। সব আল্লাহর রহমত। শ্রমিক রহিম বলেন, ‘আমার জ্বর ও সর্দি হয়। তবে পাথর না তুলে উপায় নেই।’
পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও বসে নেই। নদীর তীরে শত শত নারী শ্রমিক পাথর নেটিং, শোটিং ও ক্রাশিংয়ের কাজ করছেন। তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে জিরো পয়েন্ট বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, শীত মৌসুমে এই তেঁতুলিয়ায় বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। তবু পাথর শ্রমিকরা কনকনে ঠাণ্ডা মোকাবেলা করে মহানন্দা নদী থেকে পাথর তুলছেন জীবন ও জীবিকার জন্য। কিন্তু তাদের শীতবস্ত্রের অভাব। সরকার তাদের যৎসামান্য হলেও সহযোগিতার চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা