২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিবিএসের চার লাখ ট্যাব উপযোগিতা হারাচ্ছে

রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধ করুন

-

দেশে সরকারি প্রকল্পের কেনাকাটায় অর্থ নয়ছয় এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। পণ্যমূল্য বেশি দেখানোর কূটকৌশল আমাদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। চামচ-চেয়ার, বালিশ ও পর্দার মতো সামান্য জিনিস কেনায় যে রেকর্ড তৈরি হয়েছে; সেটি ভাঙা ভবিষ্যতে হয়তো সম্ভব হবে না। সরকারি কাজে রাষ্ট্রীয় অর্থ তছরুপ হবে; ধরে নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাজেট বরাদ্দ চলছে। এর মধ্যে সরকারি কিছু কাজে পরিকল্পনার বড় অভাব সামনে চলে আসছে। কর্মকর্তারা প্রকল্পে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করে কেনাকাটায় আগ্রহী। কিন্তু জনগণের অর্থে কেনা মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণ ও ভবিষ্যতে কাজে লাগানো যাবে কি-না ওই ব্যাপারে তারা থাকেন বেখবর। ফলে শত শত কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার নজির তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কেনা চার লাখ ১০ হাজার ট্যাবলেট পিসি (ট্যাব) নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝিতে বিবিএস দেশব্যাপী ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ কাজে ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এগুলো কিনে। শুমারির কাজ জুনে শেষের পর বিপুলসংখ্যক ট্যাব গুদামজাত করা হয় আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে। তবে বিবিএসের বিভিন্ন শাখায় ট্যাবের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি-না, প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। তাতে কিছু চাহিদা পাওয়া গেলেও এগুলোর অল্পসংখ্যক ব্যবহারের সুযোগ হতে পারে।
সহযোগী একটি দৈনিক জানায়, বিবিএসের বিভিন্ন শাখা থেকে ১৭ হাজার ৮১৮টি, মাঠপর্যায় থেকে তিন হাজার ৫১৭টি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে ২৫০টি ট্যাবের চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে। ‘অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৩’ পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি এক লাখ ৪০ হাজার ট্যাবের চাহিদাপত্র এসেছে। তবে ২০২৩ সালে জরিপটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ এ কাজেও সম্ভবত এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। ট্যাবের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড পার হয়ে গেলে এগুলোর কার্যকারিতা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। তাই বেশির ভাগ ট্যাবের পুনঃব্যবহারের সম্ভাবনা ক্ষীণ তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
এবারে বিবিএসের জনশুমারির তথ্য-উপাত্তে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এর আগে অনুষ্ঠিত পাঁচটি শুমারির কোনোটিতে এমনটি দেখা যায়নি। যদিও ওই সময় গণনাকাজ হয়েছে কাগজ-কলমে সনাতন পদ্ধতিতে। এবার একই কাজ করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। এতগুলো ট্যাব কেনার সময় এর ব্যবহার নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা করা উচিত ছিল। সরকারি সম্পত্তি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়; তার একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল আগেই নির্ধারিত হওয়া দরকার। এমনটি না হওয়ায় এটি স্পষ্টত জনগণের টাকার অপচয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। একটি ট্যাব দিয়ে বিবিএসকর্মীরা এক সপ্তাহ তথ্য সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধের কাজ করেছেন। অথচ যে কাজটি কিছু অর্থ ব্যয়ে সম্ভব ছিল। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিন খবর পাওয়া যাচ্ছে সরকারি কেনাকাটায় তছরুপের। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকের খবর, মাত্র ৬০ হাজার টাকার ফটোকপিয়ার কেনা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকায়। এ ধরনের অতিরিক্ত দামে কেনাকাটা এমনই সাধারণ নিয়ম হয়ে গেছে যে, সেটি না হওয়াই অস্বাভাবিক।
সরকার সদিচ্ছ দেখালে বিবিএসের কেনা বিপুল ট্যাব এখনো কাজে লাগানো সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা এগুলো ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন; তাদের এটি দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে সুলভ মূল্যে আগ্রহীদের দেয়া যায়। চাইলে ভালো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করতে পারে সরকার। তাহলে জং ধরে নষ্ট হওয়ার চেয়ে কিছুটা হলেও কাজে লাগতে পারে এগুলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে- এ ধরনের মূল্যবান জিনিস ক্রয়ের আগে উপযুক্ত ব্যবহারের দিক নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা। কোনো একটি প্রকল্প যদি একটি উচ্চমূল্যের মেশিনের বদলে কম দামে অন্য কোনো বিকল্পে করা সম্ভব হয়; তাহলে তা দিয়েই কাজটি সম্পাদন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বিবেচনায় নিতে হবে, কোনোভাবেই জনগণের অর্থের অপচয় যাতে না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement