সুষ্ঠু পরিবেশের অপেক্ষা শুধু
- ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
বাংলাদেশে শিক্ষাব্যয়ের ৭১ শতাংশই জোগান দিতে হয় পরিবারকে। পাকিস্তানে যা ৫৭ শতাংশ। ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সরকারিভাবে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয়। আর বাংলাদেশে ঋণ দেয়া তো দূরের কথা, সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে অযৌক্তিক হারে ফি বাড়ানো ও সেই ফির ওপর আবার কর আরোপ করা হয়। ফলে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খায় বেশির ভাগ পরিবার। এ থেকে বোঝা যায়, জাতির মেরুদণ্ড বলে স্বীকৃত শিক্ষার বিষয়টি এ দেশে কতটা স্বল্প অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।
‘ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ বলছে, শিক্ষার মান বাড়ানোর ওপর সরকার জোর দিলেও বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে যথেষ্ট নয়। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ইউনেস্কোর এ প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মহামারীকালে বাংলাদেশে সরকারি শিক্ষকরা বেতন পেলেও বেসরকারি শিক্ষকরা পেয়েছেন তাদের বেতনের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। তবে অনেক ক্ষেত্রে এমনও ঘটেছে, বেসরকারি শিক্ষকরা মাসের পর মাস কোনো বেতনই পাননি।
রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেন, শিক্ষকতা পেশাকে আমাদের আরো অনেক বেশি আকর্ষণীয় করতে না পারলে, কেবল অযোগ্যরাই এই পেশায় আসবেন। কথা যথার্থ, কিন্তু শিক্ষকতা পেশা আকর্ষণীয় করতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা সেটি বলেননি। মূলত এ বিষয়ে তেমন কিছু করা হয়নি। তবে এটি ঠিক, শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সরকার যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে; আগের কোনো সরকার তা করতে পারেনি।
২০১০ সালে একটি শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হয়, যার সামান্যই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। যেটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, যেমন- সৃজনশীল প্রশ্নমালার প্রবর্তন, সেটি শিক্ষার গুণগত মান সর্বতোভাবে খর্ব করেছে। এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন এমনটিই বলে।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল- প্রাথমিক শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক ও সবার জন্য এক মানের। সেটি হয়নি; বরং বিচিত্র ধরনের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছে যার বেশির ভাগই মানহীন। বলা হয়েছিল- প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। এ নিয়ে পরে আর কোনো কথা শোনা যায়নি। অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণীতে পাবলিক পরীক্ষা চালু করা এ সরকারের শিক্ষা সম্পর্কিত বিচিত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদাহরণ। মুখস্থবিদ্যা অত্যন্ত খারাপ বলে একসময় নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নমালা চালু করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের আর বই পড়ারই দরকার হয়নি। টিকচিহ্ন দিয়ে সহজে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য কিছু প্রশ্নোত্তর জেনে নিয়েছে শুধু। শিক্ষার্থীদের পাসের হারের ওপর স্কুলের এমপিও- ইত্যাদি নির্ভরশীল করার কারণে শিক্ষকরা গড় নম্বর দিয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীকেও পাস করিয়ে দিচ্ছেন, এমন ঘটনা সবারই জানা। এভাবে শিক্ষা সংস্কারের নামে একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শিক্ষার মান পুরো ধসিয়ে দিয়েছে বললে নিশ্চয়ই বাড়িয়ে বলা হবে না।
আজকের সময়ে এসে যখন দেখা যায়, বিভিন্ন সেক্টরে কাজের জন্য যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না, বিদেশ থেকে লোক ভাড়া করতে হচ্ছে- তখন শিক্ষার অবনতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আমরা বাড়াতে পারিনি। সব শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠানে ভিড় করে। বেশির ভাগই ভর্তি হতে পারে না। তাদের মানহীন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হয়। একই সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলবাজি, ছাত্ররাজনীতির কালো থাবা শিক্ষার সর্বনাশ করে ফেলেছে। তাই শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে খুব বেশি আশা করার নেই। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসে কিনা সেটিই দেখার বিষয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা