কর্তৃপক্ষ আগের মতো উদাসীন
- ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
নতুন বছরে বইয়ের ঘ্রাণ নেয়ার আগ্রহ ছাত্রদের সাথে সারা জাতির মধ্যে বিস্তার লাভ করলেও এখনো সরকার কাজটি সুচারুরূপে এক বছরও পালন করতে পারেনি। এ নিয়ে প্রচারণা হইচই যতটা বেড়েছে সে তুলনায় এর মান বাড়া দূরে থাক বরং পাল্লা দিয়ে বছর বছর তা কমছে। এবার পাঠ্যের ভুল, অসংলগ্নতার পাশাপাশি কাগজ ও ছাপার মানেও অবনতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পেয়েছে আংশিক বই, একটা অংশ কোনো বই পায়নি। অথচ পাঠ্যপুস্তক কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম নিয়ে সরকার কৃতিত্ব নিতে কোনো কৃপণতা করেনি। এ নিয়ে বছরের শুরুতে সরকারের আয়োজন অনুষ্ঠানের কমতি নেই। মূল কথা হলো, শিশুদের উন্নত ও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের বিষয়টির চেয়ে সরকারের রাজনৈতিক লাভের বিষয়টি অধিক প্রাধান্য পাচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের খবর আসছে সংবাদমাধ্যমে। জানা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা এক দুটো বই পেয়েছে। বাকি বই কবে পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের ২৭ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ১৯ শতাংশ বই ছাপানো বাকি রয়েছে। সব বই ছাপানো হতেই বছরের প্রথম মাস পুরোটা লেগে যাবে। ছাপা হওয়া বই আবার সুশৃঙ্খলভাবে বিলি বণ্টন হয়নি। প্রাপ্ত বই খুলে দেখা যাচ্ছে, নিম্নমানের নিউজপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ছাপার মান আরো নিম্ন। প্রতি পাতায় কালো কালির দাগ। নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণিকক্ষে শেখানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অনুশীলন পাঠ্যবইয়ের ভেতরেই বেশি হবে। কাটাকুটি লেখালেখি করতে হবে বইয়ের ভেতর। সে জন্য ভালো মানের কাগজ, উন্নত মানের ছাপার টেকসই পুস্তক দরকার ছিল; কিন্তু প্রাপ্ত বই কয়েক মাসের বেশি ব্যবহার- উপযোগী নয়। শিক্ষা বছর পার করতে তাই বিপাকে পড়বে শিক্ষক ও ছাত্ররা।
বইয়ের আধেয় নিয়ে বিতর্ক আগে থেকে চলছে। অনেকে অভিযোগ তুলছেন শিশু শিক্ষায় ক্ষতিকর অবাঞ্চিত সাম্প্রদায়িক চেতনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়ছে। উদ্ভট গল্প ও পৌরাণিক কাহিনী যার কোনো বাস্তবতা নেই সেগুলো অপ্রাসঙ্গিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পারিবারিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচিত করাতে গিয়ে এমন ভাবনার উদয় করানো হয়েছে যেগুলোর সাথে বাংলাদেশের শিশুদের প্রসঙ্গ খাপ খায় না। এ ছাড়া মানুষের নাম বাছাই করা হয়েছে একচেটিয়াভাবে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে। মানবিক মূল্যবোধকে দেয়া হয়েছে কম গুরুত্ব। এ ছাড়া আরো যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল এবারো সেগুলো রয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠছে। প্রতিষ্ঠিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা প্রকাশে এবার ভুল করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক প্রশাসনিক ইতিহাস নিয়ে ঘটা এসব ভুল পত্রিকায় গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
তড়িঘড়ি বই ছাপিয়ে শেষ করার তাগিদকে ভুলভ্রান্তির কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ ভুল শেখানোর চেয়ে না শেখানো ভালো, এ কথাটি আমাদের সবার জানা। এবার চার কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য বই ছাপানো হচ্ছে। প্রাথমিকে ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি ও মাধ্যমিকে ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বই ছাপানো হবে। এটা একটা মহাকর্মযজ্ঞ। এটি ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে করতে হবে। এ কাজ তড়িঘড়ি করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। সারা বছর পাঠ্যপুস্তক কর্তৃপক্ষ কী করে সেই প্রশ্নও এসে যায়। সময় নিয়ে বছরের শুরু থেকে পুরো কাজটি সন্তর্পণে শেষ করা উচিত হলেও প্রতি বছরই একই ধরনের তড়িঘড়ি আমরা দেখতে পাচ্ছি।
পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অভিযোগ আপত্তির কোনো জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনটিসিবি। সরকারের মন্ত্রীরাও এ নিয়ে কখনো জবাবদিহি করেন না। সে জন্যই প্রতি বছর একই ভুল ও ত্রুটিবিচ্যুতির পুনরাবৃত্তি ঘটছে। একটি নির্ভুল ও উন্নতমানের পাঠ্যপুস্তক বছরের শুরুতে শিশুদের হাতে তুলে দিতে হলে প্রথমেই কর্তৃপক্ষের নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করতে হবে। নিজেদের শিথিলতা গাফিলতির জন্য অনুশোচনা করতে হবে। সেটি না করায় এটাই ধারণা করা যায় যে, তারা দেশের কোটি কোটি শিশুর শিক্ষা নিয়ে শতভাগ আন্তরিক নন। তাদের উৎসব আয়োজন একেবারে দলীয় লাভালাভের দৃষ্টিকোণ থেকে নেয়া হয়। তাতে কোনো ধরনের আদর্শিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা