অবহেলা রীতিমতো অপরাধ
- ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ছাগলনাইয়া উপজেলার মুহুরী সেচ প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার কৃষক ও স্কিম ম্যানেজাররা এখনো আবাদ শুরু করতে পারেননি। বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে প্রকল্প এলাকায় সেচ বন্ধ রয়েছে। ফলে চাষাবাদ শুরু করা যাচ্ছে না। উপজেলার কয়েক শ’ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জেলায় খাদ্য উৎপাদনে ধস নামা ও কৃষকদের জীবন-জীবিকার ওপর নীতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
নয়া দিগন্তের ফেনী ও পরশুরাম প্রতিনিধি এ বিষয়ক খবরে জানিয়েছেন, সেচের বিষয়টি নিয়ে স্কিম ম্যানেজারদের সাথে কৃষকদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সনাতন পদ্ধতির ডিজেলচালিত পাম্পগুলো বন্ধ। তাই বিদ্যুতের বিকল্প নেই। সংবাদদাতা জানান, চলতি মৌসুমে স্কিম চালুর আগে মাত্র এক মাসের মধ্যে পাউবোর ৬০টি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাঁচটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। সেচ না পেয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে স্কিম ম্যানেজার ও কৃষকদের। প্রতিদিন জমিতে পানি দিতে এসে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন কৃষক। সময়মতো সেচ দিতে না পারলে ছাগলনাইয়া উপজেলার বেশির ভাগ জমি চলতি ইরি-বোরো আবাদের বাইরে থাকবে।
ফেনী ও চট্টগ্রামের পাঁচটি উপজেলা মিলিয়ে মুহুরী প্রকল্প হলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। শুষ্ক মৌসুমে মুহুরী, কহুয়া ও ফেনী নদী তীরবর্তী ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আশির দশকে ১৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি নির্মিত হয়। এটি চালুর পর এলাকায় খাদ্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে।
এই প্রকল্প ঘিরে রীতিমতো পর্যটনও চলে। সেখানে এতটুকু সতর্কতা বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকা বিস্ময়কর। সব ট্রান্সফরমার নিশ্চয়ই এক দিনে চুরি যায়নি। পর পর ৬৫টি ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ার ঘটনা শুধু বিস্ময়কর নয়, এটি অবিশ^াস্য। কারণ, একটি চুরির ঘটনার পর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সবার সতর্ক হওয়ার কথা। বাস্তবে তা হয়নি। হলে এতগুলো ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেত না।
কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করে সেচের ব্যবস্থা করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় প্রশাসন কেউ কৃষকের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি। কৃষকের সমস্যার চেয়েও নিশ্চয়ই আরো অনেক গুরুতর সমস্যা তাদের আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ম্যানেজাররা জানিয়েছেন, পাউবোর কর্তাব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। আবার পল্লøী বিদ্যুতের জোনাল অফিসার জানিয়েছেন, পল্লী বিদ্যুতের চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমার স্কিম ম্যানেজার ও কৃষকদের সরবরাহ করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম বলেছেন, তারা উপরে লিখেছেন- এখনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
স্পষ্টতই একটি আমলাতান্ত্রিক বন্ধ্যত্বের চক্রে পড়ে গেছে পুরো বিষয়টি। আমাদের প্রশ্ন, পুরো প্রকল্পের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার নিরাপত্তার দায়িত্ব আসলে কার? নির্দিষ্ট করে কারো ওপর কি আদৌ এর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া আছে? যন্ত্রপাতির দেখাশোনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনে যন্ত্রাংশ বদলে দেয়ার দায়িত্ব কি নির্দিষ্ট কারো ওপর আছে? যদি থাকে তাহলে ট্রান্সফরমার কেন কৃষক বা স্কিম ম্যানেজারদের দিতে হবে? আমরা আশা করব, বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অবিলম্বে সুরাহা ও সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা যখন হুমকির মুখে, যখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, প্রতি ইঞ্চি জমিতে চাষাবাদ করতে হবে, ফলন বাড়াতে হবে, ঠিক সেই সময় কারো অবহেলায় শত শত হেক্টর জমি চাষের বাইরে থাকবে, এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ধরনের অবহেলা রীতিমতো অপরাধ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা