খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
- ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
আরো একটি নতুন বছরের সূচনা হলো। রাজধানীতে বিপুল শব্দদূষণের মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ বরণ করল তরুণরা। কিন্তু প্রবীণদের কাছে মূল বিবেচ্য হয়ে উঠেছে, নতুন বছর কতটা স্বস্তির, কতটা সম্ভাবনার হতে পারে সেই বিষয়টি।
নতুন বছর উপলক্ষে গণমাধ্যমে জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর ওপর আলোকপাত করে বিশিষ্টজন ও বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। তাতে সাধারণ মানুষের বা পাঠকের জন্য স্বস্তির কারণ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, মানবাধিকার, শিক্ষা, এমনকি খাদ্যপ্রাপ্তির মতো প্রাথমিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত থাকবে- এতটুকুও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ।
সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে সাধারণভাবে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্য দিয়ে জনজীবনে যে ভাটার টান শুরু হয় তা আর কাটিয়ে ওঠা যায়নি। নানা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে বিপুল অর্থব্যয় ও লুটপাট, অর্থপাচারের মতো ঘটনা রোধের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারার কারণে অর্থনীতিতে ধস নামে। যুদ্ধের কারণে বিশে^ ডলারের দাম বেড়ে যায় এবং দেশে এর বিরূপ প্রভাব রোধ করতে ব্যর্থ হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশে^র অন্যান্য দেশের মতোই মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বাড়ে। রিজার্ভ কমে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অবস্থা এমন যে, জ্বালানি আমদানির মতো অর্থ নেই। খাদ্য আমদানির জন্য দেশের কোনো ব্যাংকই এলসিতে অনুমোদন দিতে রাজি হচ্ছে না। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়া নতুন বছরে তীব্রভাবে অনুভূত হবে। খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, বিশ^বাজারে পণ্যমূল্য ও ডলারের দর বৃদ্ধির প্রভাব সব দেশেই পড়েছে। প্রতিটি দেশের সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেই প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে পারেনি।
সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশে দুর্বলতা দেখা গেছে। এমন মন্তব্য বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদের। তিনি ডলারের দর বেড়ে যাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপ কিভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে সেই দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেন। সেই সাথে নতুন বছরে খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
খাদ্যনিরাপত্তার সাথে জ্বালানির সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। খাদ্য আমদানি করে অল্পস্বল্প ঘাটতি মেটানো যায়, বড় ঘাটতি হলে সেটি সম্ভব নয়। ধান চাষে বিদ্যুৎ ও ডিজেল ঠিকমতো দিতে না পারলে খাদ্য নিরাপত্তা বড় হুমকিতে পড়বে। সরকার বাইরের দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে যাচ্ছে। এটি যে সমাধান নয় তা যে কারো পক্ষে বোঝ সম্ভব। ভারত থেকে এর আগে যা কিছুই আমদানি করা হয়েছে কোনোটিরই অভিজ্ঞতা সন্তোষজনক নয়। করোনার টিকা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা মানুষ সম্ভবত ভোলেনি।
পরিস্থিতি যে স্বস্তিকর নয় তা সরকারও বুঝতে পারছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার জাতিকে সতর্ক করা হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে। মানুষকে সঞ্চয়ী হওয়ার, প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসলের চাষ করার মতো পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
খাদ্যনিরাপত্তার তিনটি দিক গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যের প্রাপ্যতা, খাদ্যপ্রাপ্তির সক্ষমতা এবং খাদ্যের পুষ্টিমান ও নিরাপদ হওয়া। বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যতম সীমাবদ্ধতা জ্বালানি বা বিদ্যুতের অভাবে সেচের সঙ্কট। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া। এমনই সময়ে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কার মধ্যে বাংলাদেশ একটি ভঙ্গুর অর্থনীতির উত্তরাধিকার নিয়ে নতুন বছরে প্রবেশ করছে। ফলে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কা সত্যি হলে তা হবে বিপজ্জনক।
যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে পরিস্থিতি এড়ানো যাবে না। ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাবারের প্রসঙ্গ আপাতত মুখ্য নয়। খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও প্রাপ্তি যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করাই একমাত্র সমাধান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা