চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
মানসিক রোগের কোনো জীবাণু খুঁজে পাওয়া যায় না। আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, মহামারী- নানা কারণে অসমতার শিকার হলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সেটি প্রকট হলে মানসিক রোগ হতে পারে। মানসিক সমস্যা আর রোগ কিন্তু এক নয়। মানসিক স্বাস্থ্য যখন খারাপ হয় তখন মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সময়মতো মানসিক সমস্যার চিকিৎসা বা নিরাময় না হলে তা একসময় প্রকট হয়ে রোগ দেখা দেয়। তবে এটিও ঠিক, অনেকে সামাজিক নানাবিধ কারণে মানসিক অসুখ গোপন করতে চান।
আমাদের সমাজে ধর্ম, বর্ণ, আর্থিক অবস্থা, শারীরিক অবস্থা- এসব নানা কিছু নিয়ে অসমতা ও বৈষম্য রয়েছে। নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, ক্ষমতাবান-ক্ষমতাহীন, প্রযুক্তি যাদের আছে, আর যাদের প্রযুক্তি নেই, এ সব ক্ষেত্রে এক ধরনের অসমতা আছে। মানসিক অভিঘাত নিরাময়ে আমাদের সম্পদ খুব সীমিত। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া প্রত্যেকের অধিকার। এগুলো আমাদের মানসিকভাবে আক্রান্ত করে, বিপর্যস্ত করে।
জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে যে জরিপ হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে- বয়স্কদের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আর তরুণদের বেলায় তা ১৩ শতাংশ। ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে অন্তত তিন কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আছেন বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর বিপরীতে চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন, এমন মানুষের সংখ্যা মাত্র এক হাজার!
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের তৈরি অসমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। ফলে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে। পরিণতিতে মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ মানুষ এখন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মানসিক সমস্যায় অনেকে চাকরি হারান, সার্বিক উৎপাদন কমে যায়, অপরাধের মাত্রা বাড়ে, এমনকি উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ে এ মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে।
মানসিক চিকিৎসাসেবা নিয়ে আমাদের অবহেলা আছে। নানা কারণে দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। যদিও এইসব ক্ষেত্রে মানসিক সেবা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশী তিন লাখ মানুষের বিপরীতে মাত্র একজন মানসিক চিকিৎসক রয়েছেন। মানসিক চিকিৎসাসেবা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা শেষ করে কাজ করছেন এমন চিকিৎসকের সংখ্যা আমাদের মাত্র ৩০০-এর মতো। আর সাইকোলজিস্ট, সাইক্রিয়াট্রিস্ট, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত সব মানুষ মিলে তাদের সংখ্যা হাজারের কম।
দেশে সরকারি মেডিক্যালের সংখ্যা ৩৬। এর ১৬টিতে কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিভাগ নেই। এ বিষয় না পড়ে এমবিবিএস শেষে চিকিৎসক হয়ে যাওয়া যায়। অথচ গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালে বিষণœতা মানুষের উৎপাদনমুখিতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ সব সমস্যার সমাধানে আমাদের যা করণীয়, তা-ই করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এটি যুক্ত করতে হবে। প্রকৃত কথা হলো- মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি উন্নত পরিবেশ দরকার। যদিও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের দেশের একটি কর্মকৌশল আছে, একটি আইন আছে; কিন্তু সবাই এগিয়ে না এলে, কাজ না করলে তা এগোবে না। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাইলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের মোট বরাদ্দের মাত্র ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এখাতে। বরাদ্দের ৬০ শতাংশ খরচ হয় শুধু প্রশিক্ষণের কাজে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণভাবে দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। এক, লঘু মানসিক সমস্যা। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্তদের সংখ্যাই বেশি। এর চিকিৎসা খুব খরচসাপেক্ষ বা প্রযুক্তিনির্ভর, এমনটিও নয়। সহমর্মিতার সাথে এ সমস্যার চিকিৎসা করা যায়। অন্যদিকে অ্যাংজাইটি, ডিজঅর্ডার, আত্মহত্যার কঠিন প্রবণতাকে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা করা যায় ।
মানসিক স্বাস্থ্যচিকিৎসা শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ নয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। গত দুই বছরে বাংলাদেশে আত্মহত্যা বেড়েছে অনেক। কিভাবে আত্মহত্যা রোধ করা যায় বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। এ নিয়ে টেকসই কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা