২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজউকে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের নথি গায়েব

কারিগরি ত্রুটি নাকি অন্য কিছু

-


ঢাকার অধিবাসীদের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থা। রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে সংস্থাটি থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও নির্মাণের অনুমোদন নিতে হয়। আগে সনাতন পদ্ধতিতে কাজটি হতো। ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে রাজউকের আটটি অঞ্চলের মধ্যে শুধু একটি অঞ্চলে (অঞ্চল-৫) ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দেয়ার মাধ্যমে অনলাইন কার্যক্রম শুরু। ২০১৮ সালে সব অঞ্চলে অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দেয়া শুরু হয়। এরপর ২০১৯ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের পাশাপাশি নির্মাণ অনুমোদন দেয়ার কাজটিও শুরু হয়।
অনলাইনে কাজটি করতে ব্যবহার করা হয় একটি ওয়েবসাইট। এখানে গিয়ে নিবন্ধন করে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও নির্মাণ অনুমোদনের আবেদন করতে হয় গ্রাহককে। ভবনের নকশাসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র গ্রাহককে এ ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হয়। পরে যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে এ ওয়েবসাইটে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও রাজউক অনুমোদিত ভবনের নকশা আপলোড করা হয়। এগুলো ডাউনলোড করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেন গ্রাহক।


রাজউক সূত্রের বরাতে একটি সহযোগী পত্রিকার খবরে প্রকাশ, ৬ ডিসেম্বর হঠাৎ ওয়েবসাইটটি অকার্যকর হয়ে যায়। সংস্থাটির সার্ভার থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদন-সংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের আবেদনের নথিপত্র গায়েব হয়ে গেছে। ৬ ডিসেম্বর বিষয়টি প্রথম জানতে পারে রাজউক। প্রশ্ন উঠেছে, এটি নিছক কারিগরি ত্রুটি, নাকি এ ঘটনায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত, সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে রাজউক। অন্য দিকে বিপর্যয়ের কারণ উদঘাটনে রাজউকের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার তিন সপ্তাহ পরও কোনো তদন্ত কমিটিও করেনি সরকারি এই সংস্থাটি।
ঢাকা মহানগরের জন্য রাজউকের প্রণয়ন করা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গত ২৩ আগস্ট অনুমোদন দেয় সরকার। এতে রাজউকের আওতাধীন বেশির ভাগ এলাকায় আগের চেয়ে কম উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে হবে জমির মালিকদের। পরে জমির মালিক ও আবাসন ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক সিদ্ধান্ত নেয়, যারা ২৩ আগস্টের আগে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রে আবেদন করেছিলেন, তারা আগের নিয়মে ভবন নির্মাণ করতে পারবেন, অর্থাৎ বর্তমান ড্যাপে উল্লিখিত আয়তনের চেয়ে বেশি আয়তন পাবেন। ৪ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজউক। এর এক দিন পর রাজউকের ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। রাজউকের একটি সূত্র বলছে, ২৩ আগস্টের আগের তারিখে আবেদন দেখানোর জন্যও একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওয়েবসাইটটি অকার্যকর করতে পারে।


যেসব গ্রাহকের নথিপত্র হারিয়েছে, তারা ২০১৯ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে আবেদন করেছিলেন। রাজউকের কিছু কর্মকর্তা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি হারিয়ে যাওয়ার কারণে ওই গ্রাহকরা নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে পারেন। এ ছাড়া দুর্নীতির সুযোগও তৈরি হতে পারে। যেমন অনেকে ভবন বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নথিপত্র যাচাইয়ে রাজউকে চিঠি পাঠায়। নথি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ওই গ্রাহকের ব্যাংকঋণ পেতে সমস্যা হবে। কারণ ব্যাংকে জমা দেয়া গ্রাহকের নথি ঠিক আছে কি নেই, সেটি যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ রাজউকের থাকছে না। আবার নথি হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে কোনো গ্রাহক চাইলে রাজউক অনুমোদিত মূল নকশা ঘষামাজা করে অনিয়ম করতে পারেন। এতে রাজউকের বাধা দেয়ার সুযোগও কম থাকবে। চ্যালেঞ্জ করার মতো নকশা এখন রাজউকে নেই। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ ভবনের উচ্চতা বাড়ালেও রাজউক ধরতে পারবে না।
আমরা মনে করি, এ ঘটনার কারণ উদঘাটনে রাজউককে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা জরুরি। ঘটনার সাথে যদি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায়, তা হলে দায়ীদের শনাক্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর অন্তর্বর্তীকালীন সনাতন পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালানো যেতে পারে; কিন্তু এখনো কোনো বিকল্প পথে রাজউকের না যাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘নানা গুজবে’ সেন্টমার্টিনে বিধিনিষেধ বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ওপর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের হামলা না’গঞ্জের পপি হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটি গঠিত চট্টগ্রামে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে শতাধিক মার্কেট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বৈষম্যের শিকার পল্লবী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহবুব কুবির সাথে ইবনে সিনা ট্রাস্টের চুক্তি, ২৫ শাখায় মিলবে সেবা এলাকাবাসীকে চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকতে কায়কোবাদের খোলা চিঠি ধলেশ্বরী নদীর মোল্লারহাট ফেরিঘাট অবৈধ দখলদারের নিয়ন্ত্রণে মোহন মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি পেলেন ঢাবির ১৫ শিক্ষার্থী

সকল