আগের কেলেঙ্কারির সুরাহা হয়নি এখনো
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
শেয়ারবাজার নিয়ে সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে এটি একটি প্রতারণার হাতিয়ার। উপর্যুপরি মানুষ এ বাজারে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়েছে। অনেকে এখানে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হয়ে গেছে। সব হারিয়ে অনেক হতাশ বিনিয়োগকারী আত্মহত্যাও করেছেন। একটি জালিয়াত চক্র রয়েছে যারা বারবার এখান থেকে লুটপাটের সুযোগ পেয়েছে। অপর দিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আশা করে, এবার মনে হয় আর লুটপাটের ঘটনা ঘটবে না। লুণ্ঠনের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই চলেছে। বড় বড় ধস নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে এর কারণ ও এর পেছনের হোতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো দূরে থাক, তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখতে দেয়নি। ফলে দেশের পুঁজিবাজারে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ অরক্ষিত রয়ে গেছে।
শেয়ারবাজার কিছু দিন পরপর খবরের শিরোনাম এখনো হচ্ছে। এমন খবর হওয়ার মূল কারণ এতে পতনসংক্রান্ত রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ গত সোমবার আড়াই বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ লেনদেন হয়েছে। সংবাদমাধ্যম শেয়ারবাজারকে ‘গভীর ঘুমে’ তলিয়ে যাওয়া বা ‘নিস্তেজ’ হয়ে যাচ্ছে বলে শিরোনাম করেছে। অর্থনীতির চরম অব্যবস্থাপনা উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার পর শেয়ারবাজারেও সে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এটি সম্প্রতি টানা পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ঐদিন সূচকের বড় পতন হয়েছে। ১৬৯ সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর দ্বিতীয় দিনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লেনদেন ২০০ কোটি টাকার নিচে মাত্র ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা হয়। আরেকটি দুর্দিনে ২০২০ সালের ৭ জুলাই এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল। অবশ্য বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর এবং ২০০৮ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আরো বড় বড় ধসের শিকার হয়। বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারী তখন পথে বসে যায়।
২০২০ সালের পর শেয়ারবাজার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ২০২১ সালে এর কিছুটা উন্নতিও দেখা যায়। তবে মানুষের আস্থা ফিরেছে, এমন নয়। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ছয় হাজার ৭৫৭.২৬ পয়েন্ট। চলতি বছরে একই দিন সেটা নেমে এসেছে ছয় হাজার ১৯৮.৮২ পয়েন্টে। এক বছরে সূচক কমেছে ৫৫৮.৪৪ পয়েন্ট বা ৮.২৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারের (সিএসই) অবস্থাও প্রায় একই হারে অবনমন ঘটেছে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সিএসই সূচক ছিল ১৯ হাজার ৬৯০.৭৮ পয়েন্ট। চলতি বছরের একই দিন এটি নেমে এসেছে ১৮ হাজার ৩০৮.১৫ পয়েন্টে। এক বছরে সূচক কমেছে এক হাজার ৩৮২.৬৩ বা ৭.০২ শতাংশ। চলতি বছরের শেয়ারবাজারে হিসাবধারীর সংখ্যাও বেশ কমেছে। বছরের শুরুতে হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ১৯ হাজার ১৮৭টি। ১৫ ডিসেম্বর দেখা যাচ্ছে, হিসাবধারীর সংখ্যা কমে ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ১৯৫টি হয়েছে।
বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য দুটো জিনিসকে বরাবর দায়ী করে আসছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন আর মহামারী করোনা। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, সরকার নিযুক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরাও শেয়ারবাজারে দুরবস্থার জন্য এগুলোকে কারণ হিসেবে দেখাতে চাচ্ছেন। অথচ এর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি ও প্রবাসী আয়, এগুলো বেড়েছে। অর্থনৈতিক সুফলের যে অংশটুকু ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণে রয়েছে সেখানে নেতিবাচকতা নেই। তাহলে শেয়ারবাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব থাকার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না কেন? মূলত শেয়ারবাজার এখনো লুটপাটকারী চক্রের অসাধু হস্তক্ষেপের ঝুঁকির মধ্যে পুরোদমে রয়ে গেছে। ফলে কেউ এ বাজারকে এখনো নিরাপদ মনে করে না। একটি নিরাপদ বিকাশমুখী শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠা করতে সংঘটিত কেলেঙ্কারির সঠিক তদন্ত ও এর হোতাদের বিচার হতে হবে। তারপর পুনরায় এ ধরনের কেলেঙ্কারির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। এগুলোর শীর্ষপদে বসাতে হবে সৎ ন্যায়পরায়ণ পেশাদার ব্যক্তিদের। তাহলেই কেবল শেয়ারবাজারে মানুষের আস্থা ফিরতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা