২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাসায়নিক মুক্ত চাষাবাদ

জাতীয় স্বার্থে সচেতনতা জরুরি

-


দেশে নিরাপদ সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে শুধু জৈবসার প্রয়োগ এবং জৈবপদ্ধতিতে কীটপতঙ্গ ও রোগাবালাই প্রতিরোধের মাধ্যমে সবজি ফলানো হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এক দিকে ক্ষতিকর সার ও কীটনাশক কেনার টাকা বেঁচে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনের ব্যয় কমছে, অন্য দিকে ফসলের দাম পাচ্ছেন বেশি।
সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক নিরাপদ সবজি চাষে কিভাবে সাফল্য পাচ্ছেন সে বিষয়ে খবর ছাপা হয়েছে। খবরে বলা হয়- সেখানে কীটনাশক ছাড়া নিরাপদ সবজি চাষ হচ্ছে শতভাগ জৈবপদ্ধতিতে। ব্যবহার করা হচ্ছে না কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক।
পোকামাকড় দমনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠাল ফাঁদ, ভার্মিকম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট প্রভৃতি জৈবপদ্ধতির। এভাবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, টমেটো, লালশাকসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন শত শত কৃষক।


একজন কৃষক জানিয়েছেন, তিনি ২৪ শতক জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। এতে উৎপাদন খরচ হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন। ফলে তার লাভ থাকবে ৬০ হাজার টাকা। লাভ বেশি হওয়ার কারণ, তাকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক কিনতে হয়নি। পোকামাকড় দমনে জৈবপদ্ধতি ব্যবহার করায় অর্থ সাশ্রয় হয়। আবার নিরাপদ হওয়ায় তার ফসলের দামও বেশি।
নিরাপদ সবজি যাতে সচেতন ভোক্তার কাছে পৌঁছায়, এ জন্য নড়িয়া উপজেলার ডগ্রিবাজারে নিরাপদ সবজি বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উৎপাদনকারীরা নিরাপদ সবজি পাইকারি দরে বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করেন এবং বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক সেগুলো খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। একই সাথে একই জমিতে সবজির পর পাট ও ধানসহ এক বছরে তিনটি ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।


নিরাপদ সবজি চাষে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে বাস্তুসংস্থান নিরাপদ থাকে। রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে শরীরে দূষণ ছড়ায়। অনেকের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হয়, চোখ ও চামড়া আক্রান্ত হয়। নিরাপদ সবজি চাষে এসব সমস্যায় ভুগতে হয় না। উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসজনিত নানা ধরনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সবজিতে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের ফলে ১০ শতাংশ রোগী বন্ধ্যত্বজনিত সমস্যায় ভোগেন। নিরাপদ সবজি চাষে এই রোগের ঝুঁকিও থাকে না।
এ ধরনের নিরাপদ সবজি চাষে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ। সংস্থার কর্মীরা নিরাপদ সবজি উৎপাদনের প্রযুক্তিগত উপকরণ দেন এর সদস্য কৃষকদের অনুদানের মাধ্যমে। এ বিষয়ে তারা প্রশিক্ষণও দেন।


নিরাপদ ফসল উৎপাদন শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্য নয়, সার্বিকভাবে দেশের জন্য উপকারী। উচ্চফলনশীল জাতের ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে রাসায়নিক এবং কীটনাশকসহ বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে আগে যেখানে এক বিঘা জমিতে পাঁচ থেকে ছয় মণ ধান হতো, এখন সেখানে হচ্ছে ৩০ মণ। উৎপাদন দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়লেও এতে মাটির উর্বরাশক্তি মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে। মাটির জৈব উপাদান বা অর্গানিক ম্যাটার কমে যাচ্ছে। আমাদের দেশের ফসলি জমিতে জৈবপদার্থের পরিমাণ এখন ৫ শতাংশও নেই। মৃত্তিকাবিষয়ক গবেষণা থেকে এ তথ্য আমাদের জানা।


মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা অবশ্য মাটিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগের পরামর্শ দেন। অর্থাৎ মাটি পরীক্ষা করে তাতে যেসব উপাদানের ঘাটতি আছে সেগুলোর প্রয়োজনমতো প্রয়োগ করতে হবে।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্য ও মাটির উর্বরাশক্তির দিকটি বিবেচনায় নিলে সবধরনের রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার বন্ধের বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে কৃষকসহ জাতীয় পর্যায়ে যত দ্রুত সচেতনতা গড়ে তোলা যায় ততই মঙ্গল।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
মধ্যাহ্নভোজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর নিহত জামায়াতের সাথে ইইউ অন্তর্ভূক্ত ৮টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক মনিরামপুরে শ্রমিক দলের সভাপতির উপর হামলা ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বিএনপি’ দেশব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগে ভুগছে ৬৫ লাখ মানুষ গ্রেড-১ এ পদোন্নতি পেলেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজি ডা. রেয়াজুল হক ‘বড় কোনো পরিকল্পনা না থাকলে এক দিনে এতগুলো ঘটনা ঘটতো না’ জুলুমের দায়ে মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনামকে পদত্যাগ করতে হবে : হেফাজত আমির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১,৮৯০ টাকা কমেছে

সকল