২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় বিপুল বাড়ছে

এ অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা উসকে দেবে

-

বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিকামী দেশগুলো সামরিকায়নের পথ বেছে নিচ্ছে। পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ কোনো অঞ্চল বাদ নেই- সব দিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত হচ্ছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন ইউরোপের সামরিক প্রতিযোগিতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্কের মতো দেশগুলো সামরিকায়নের চিন্তা শুরু করে দিয়েছে। যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকে ইউরোপে অস্ত্রের ব্যবসায় বিপুল বেড়ে যাওয়ার খবর দিয়েছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ (সিপরি)। এদিকে সর্বশেষ এক ঘোষণায় এশিয়ার সবচেয়ে শান্তিকামী ও ধনী দেশ জাপান সামরিক ব্যয় বিপুল বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে জাপানের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ এ অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনাকে ভিন্ন মাত্রা দেবে।
সিপরি গত পাঁচ বছরের অস্ত্র ব্যবসায় নিয়ে চলতি বছরের প্রথম দিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে শক্তিশালী উন্নত ও শান্তিপূর্ণ ইউরোপের ব্যাপারে ভিন্ন রকমের এক বার্তাই উঠে আসছে। তাদের মতে, করোনা মহামারী দুই বছরে সারা বিশ্বে অস্ত্র ব্যবসার ৪ শতাংশ সঙ্কোচন হলেও ইউরোপে সেটি রেকর্ড ১৯ শতাংশ বেড়েছে। ইউক্রেন আগ্রাসনের আগে থেকে তলে তলে ইউরোপ যে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বিপুল অস্ত্র ক্রয় তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাশিয়ার এ হামলার পর সেটি আরো তীব্রতর হয়েছে। দেশগুলো ২০২৫ সালের মধ্যে এক অভিন্ন ঝটিকা বাহিনী গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইইউ দেশগুলোর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- এত কাল তারা রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতিকে সবল করেছে। এর সুফলও তারা পেয়েছে। কিন্তু নিজেদের অভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকার খেসারত গুনতে হতে পারে সামনে। সে জন্য তারা এখন নিজেদের সমন্বিত নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তৎপর হয়ে উঠছে। এ ধরনের সামরিক লক্ষ্য গ্রহণ বাকি বিশ্বের জন্য ভালো কোনো ইঙ্গিত দেয় না। এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএ) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় আশঙ্কাজনক বাড়ছে।
নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে জাপান তার জাতীয় নীতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক শক্তির প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়। ওই সময় তারা শুধু একটি আত্মরক্ষামূলক সেনাবাহিনী রাখার বিধান সংযুক্ত করে সংবিধানে। অথচ দেশটি আমেরিকার কাছে পরাস্ত হওয়ার আগে এ অঞ্চলে সবচেয়ে আগ্রাসী শক্তি ছিল। তারা কোরিয়া, চীনসহ অত্র অঞ্চলের বিপুল এলাকা উগ্র সামরিক শক্তির বলে দখল করে রেখেছিল। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সামরিক শক্তি বাড়াতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করে মোট দেশজ উৎপাদনকে ২ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এ জন্য তাদের জাতীয় কৌশলপত্র ঢেলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করছে। তারা একে আক্রমণ প্রতিরোধে শক্তি বাড়ানোর প্রকল্প হিসেবে দেখছে। এর মাধ্যমে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে তারা। পাল্টা আঘাত হানতেও এটি সক্ষম থাকবে। রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তারা আশঙ্কা করে, এর ফলে তাইওয়ানে হামলা চালাতে উৎসাহী হতে পারে চীন। এতে হুমকিতে পড়বে জাপান। এর ফলে তাদের জলপথে ব্যবসায়-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে। জাপানের সামরিক নীতি এভাবে মোটা দাগে পরিবর্তনে জনগণেরও আগ্রহ রয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ নাগরিক নতুন প্রতিরক্ষা নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
জাপান পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি। বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ চীনের উঠে আসার আগে তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রধান অর্থনৈতিক পরাশক্তি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পরই তাদের অবস্থান ছিল। প্রতিরক্ষা খাতে নতুন বিনিয়োগ শুরু হলে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ সামরিক ব্যয়ের দেশে পরিণত হবে। তার আগে থাকবে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। পৃথিবীবাসীর জন্য এটি কোনোভাবেই ভালো খবর নয়। এর ফল এ অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনাকে আরো উসকে দেবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জাপানি সামরিক শক্তির ভয়ে এ অঞ্চল তটস্থ থাকত। সেই অবস্থা আবার ফিরে আসছে। এ ছাড়া দরিদ্র দেশের উন্নয়নে তহবিল সরবরাহকারী হিসেবে জাপানের সুনাম ছিল। সামরিকায়নের পথে হাঁটলে দেশটিকে ‘দানের অর্থ’ কাটছাঁট করতে হবে। সব মিলিয়ে এটি বিশ্ববাসীর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।


আরো সংবাদ



premium cement