২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভেজাল গুড়ে ফরিদপুর সয়লাব

ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে দেবেন না

-

ফরিদপুরের গ্রামগঞ্জে মেঠোপথের দুই ধারে, নদী-নালা-খালপাড় ঘেঁষে ও বসতবাড়ির ভিটের চার পাশে সারি সারি খেজুরগাছের দেখা মিলত। শীতের আগমনের শুরু থেকেই এসব গাছ থেকে রস আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন ‘গাছিরা’।
অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতের পুরো মৌসুম ফরিদপুরের গ্রামগঞ্জে এটি ছিল চিরচেনা দৃশ্য। তবে এখন আর সে দৃশ্য চোখে পড়ে না। খেজুরগাছ কেটে ফেলা, এর বিপরীতে নতুন করে খেজুরগাছ না লাগানো, গাছি-পেশায় নতুনদের আগ্রহ কম থাকায় আজ সে দৃশ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। এই সুযোগে হাটবাজার সয়লাব হয়ে গেছে ভেজাল খেজুর গুড়ে। এখন চিনির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে, বাজারে খাঁটি খেজুর রসের এক কেজি গুড় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ফরিদপুরে এখন প্রায় ২০০ হেক্টর জমির ওপর এক লাখ ২০ হাজারের মতো খেজুরগাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ টন রস হয়, যা থেকে পাওয়া যায় প্রায় ২৫০ টন খেজুরের গুড়। জেলায় সবচেয়ে বেশি খেজুরগাছ রয়েছে দুই উপজেলা বোয়ালমারী ও নগরকান্দায়। সদর উপজেলাতেও রয়েছে প্রচুর খেজুরগাছ। এ ছাড়া সালথা, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুরেও কমবেশি অনেক খেজুরগাছ রয়েছে। ডোমরাকান্দির ‘ভিপি গিয়াস’ জানান, তিনি প্রতি কেজি খেজুরের খাঁটি গুড় ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন। অবশ্য বিভিন্ন স্থানে খাঁটি গুড় ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। ভেজাল গুড় প্রতি কেজি বিক্রি হয় মাত্র ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
আগে শীত মৌসুমে খেজুর রসের প্রচুর সরবরাহ থাকায় প্রায় প্রতি গৃহস্থের বাড়িতেই রস জ্বাল দেয়ার বড় চুল্লি বানানো হতো। ওসব চুল্লিতে খেজুর রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির ধুম পড়ে যেত। টিনের বড় পাত্রে রস জ্বাল দিয়ে ঘন করা হতো। তারপর সে রস জমাট বাঁধিয়ে গুড় বানানো হতো। সেই গুড় কাপড়ে মোড়ানো ছোট ছোট পাত্রের ছাঁচে ফেলে বানানো হতো ‘পাটালি’। শীতের আমেজে পিঠাপুলিতে ব্যবহৃত হতো পাটালি গুড়। সে চিত্র প্রায় হারিয়ে গেছে। এক গাছি বলেন, গ্রামে খেজুরগাছ নেই বললেই চলে। তাই এখন আর গাছ ‘ঝুড়েন না’ তিনি। আগে তিনি প্রতিদিন ৩০-৪০টি খেজুরগাছ ঝুড়তেন। এখন গরিব মানুষের পক্ষে খেজুরের গুড় কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু লোকেরা এই গুড় কিনে নিয়ে সেই গুড়ে চিনি মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করে। ক্ষুদ্র গুড় ব্যবসায়ীরা জানান, ভেজাল গুড় তৈরির জন্য একশ্রেণীর লোক তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে খেজুরের ঝোলা গুড় কিনে এনে তার সাথে রঙ, আটা ও চিনি মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করে থাকে। সেসব গুড় আসল গুড়ের চেয়ে মাত্র অর্ধেক দামে বিক্রি করে প্রচুর লাভ করছে তারা।
ফরিদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক জানান, এ ব্যাপারে তাদের ‘নজরদারি’ রয়েছে। বাজারে যারা গুড় বিক্রি করেন, তারা গুড়ে চিনি মিশিয়ে থাকেন বলে তিনি স্বীকার করেন।


আরো সংবাদ



premium cement