২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
হাতকড়া ডাণ্ডাবেড়ি পরে মায়ের জানাজায়

এটি জুলুম অশোভন অমানবিক

-

তিনি কোনো দুর্ধর্ষ আসামি নন, দাগি অপরাধীও নন। তিনি বন্দী হয়েছেন ‘গায়েবি’ মামলায়। সেই মামলার বাদি দেশের অন্যতম সেরা দৈনিককে বলেছেন, ‘কসম, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখানে আলাউদ্দিন এসআই ছিল। ওই স্যার আমারে বারবার ফোন দিয়া অস্থির কইরা ফেলছে। আমি বলছি, স্যার, আমি দাওয়াতে আছি। আমি দাওয়াতে থাইক্যা মামলা করালাম কিভাবে? আমি ছিলামও না, দেখিও নাই। স্যারেগো আমি কইছিলাম, স্যার, আমারে আপনারা ঝামেলায় ফালাইয়েন না।’
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নাকি হামলা হয় গত ২৯ নভেম্বর। হামলার অভিযোগে থানায় মামলা করেন ওই কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান শেখ। তিনি সহযোগী একটি দৈনিককে বলেছেন উপরের কথাগুলো। রিপোর্ট প্রকাশ পায় গত ৩০ নভেম্বর। এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট জেলার আওয়ামী লীগের কোনো নেতা, গাজীপুর পুলিশ বা প্রশাসন ওই রিপোর্টের সত্যতা চ্যালেঞ্জ করেনি বা কোনো প্রতিবাদও জানায়নি। সুতরাং মামলা যে আসলে ‘গায়েবি’ তাতে সন্দেহ নেই। অথচ এ মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেøøখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরো ১৫০ জনকে। অর্থাৎ এতগুলো মানুষকে সম্পূর্ণ বিনা কারণে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এই মামলায় আটক বিএনপি নেতাকে তার মৃত মায়ের জানাজা পড়তে হলো হাতে হাতকড়া ও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায়। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম। গত মঙ্গলবার জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে নিজ বাড়ি কালিয়াকৈরের পাবরিয়াচালা এলাকায় মায়ের জানাজায় উপস্থিত হন। নিজেই মায়ের জানাজা পড়ান। জানাজার নামাজ পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি খুলে দেয়ার জন্য পরিবারের অনুরোধ রাখেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপস্থিত লোকজন।
হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় জানাজা পড়ানোর এ বেদনাদায়ক অমানবিক ঘটনার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এ ঘটনা। কারণ কেবল দুর্র্ধর্ষ অপরাধী, সন্ত্রাসী ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়ে থাকে। আলী আজম এর কোনোটাই নন। তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
জেল কোডের ৭২১ ধারা অনুযায়ী, কেবল দুর্র্ধর্ষ বন্দীদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করতে আদালতে পাঠানোর সময়ে পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি লাগাতে হবে। আসামি দুর্ধর্ষ কি না সেটি নির্ধারণ ও দুর্ধর্ষ হিসেবে চিহ্নিত হলে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া বলা আছে।
জেল কোড অনুযায়ী, দুর্র্ধর্ষ কিংবা ঘৃণ্য অপরাধীর বিষয়ে পুলিশ কারা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর পরই কারা কর্তৃপক্ষ আসামি সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। সব ধরনের তথ্য বিশ্লেষণের পর কারা কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, তবে কারারুদ্ধ অবস্থায়ও তার পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো যাবে।
এ বিষয়ে সহযোগী ওই দৈনিকের অনুসন্ধানের জবাবে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইন উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা জজ এস এম রেজাউল করিম স্পষ্ট করেই জানান, আলী আজমের মতো একজন সাধারণ আসামিকে মায়ের জানাজায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেয়া যাবে না। এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের উচ্চতম পর্যায় থেকে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগ কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না। আলী আজমসহ সারা দেশে যাদের মিথ্যা ‘গায়েবি’ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে, তাদের অধিকার খর্বের বিষয়টি কি মানবাধিকারের আওতার বাইরে?
সংবিধান অনুযায়ী তো বাংলাদেশের সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। তা কি পাচ্ছেন সবাই! আলী আজমের ঘটনাটি তো রীতিমতো রাষ্ট্রীয় জুলুম। এটি অশোভন, অমানবিক। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement